October 30, 2024, 8:01 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকে অনুমোদন পেলো কুষ্টিয়া মেডিকের কলেজ নির্মাণের দ্বিতীয় সংশোধন প্রকল্প।
মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক শুরু হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে যুক্ত হন। অন্যদিকে এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজসহ ছয় হাজার ৫৫১ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর মধ্যে নতুন প্রকল্প চারটি আর সংশোধিত প্রকল্প পাঁচটি।
৯ প্রকল্পে সরকারি অর্থায়নে তিন হাজার ৭৪২ কোটি ২৯ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব ঋণ ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা ও বৈদেশিক ঋণ দুই হাজার ৭৮২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সংবাদ সম্মেলনে প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরেন।
কুষ্টিয়া মেডিকের কলেজ প্রকল্পটি শুরু হয় ২৭৫ কোটি টাকায় সেই ২০১২ সালে। শেষ করার মেয়াদও দিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু সমাপ্তির মুখ আজও দেখতে পেলো না প্রকল্পটি। বরং কবে শেষ হবে সেটা চরমভাবে এখনও অনিশ্চিত। ওদিকে ধাপে ধাপে সেই প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে। কাজ শেষ না হলেও এখন বেড়ে হয়েছে ৬৮২ কোটি টাকা।
২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও গত ১০ বছরে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করতে পারেনি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে, চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রকল্পটি দ্বিতীয় সংশোধনীর জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু একনেক সভায় প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং প্রকল্পটি অনুমোদন না দিয়ে সেটি ফেরত পাঠান। একই সঙ্গে দেরি হওয়ার কারণসহ প্রকল্পের সার্বিক দিক দ্রুত তদন্ত করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
ওই সময়ের একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, প্রকল্পটির কাজের গতি সন্তোষজনক নয়। অত্যন্ত অসন্তুষ্টি এবং বিরক্তি প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন- এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণযোগ্য নয়। এমন ধরনের প্রকল্প আমরা নেব না। আইএমইডির মাধ্যমে তাৎক্ষণিক তদন্ত করতে হবে। আদ্যোপান্ত, আর্থিক বৈষয়িক এবং ম্যাটেরিয়াল সব বিষয় দেখতে হবে। দরকার হলে যেকোনো সংস্থার সহায়তা নিতে পারে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ২৭৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরে প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছিল একনেক। এরপর প্রথম দফায় ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর।
ঘটনায় প্রচন্ড ক্ষব্ধু হন প্রধানমন্ত্রী। আবারো সময় চাওয়া ও আরো অতিরিক্ত অর্থ চাওয়ায় তিনি এ সংক্রান্ত প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেননি। পক্ষান্তরে তদন্তের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে দেরি হওয়ার কারণসহ প্রকল্পের সার্বিক দিক দ্রুত তদন্ত করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। ওদিকে এ ঘটনায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের চরম অযোগ্যতা ও ব্যর্থতার বিষয়টি আবার সামনে আসে।
এমতবস্থায় প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে গণভবন থেকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, তিন বছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে কেন ১১ বছর সময় লাগবে? কারণও তিনি জানতে চান। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান আরও জানান, মেয়াদ শেষ হলেও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৫৫ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি আরও কম। অর্থাৎ ৩৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এখন নতুন করে ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ২৭৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরে প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছিল একনেক।
প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে- প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত নির্মাণ কাজের পরিধি ও ব্যয় বৃদ্ধি, জমির পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, যানবাহন, এমএসআর সামগ্রী এবং অফিস সামগ্রীর ব্যয় বৃদ্ধি, নতুন কোড সংযোজনের কারণে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে- ২০১৮ সালে পিডব্লিউডির রেইট শিডিউল পরিবর্তন হওয়ায় প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে। এছাড়া প্রকল্পে কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করা, নতুন ভৌত কাজ সংযোজন (যেমন- আনসার ও ড্রাইভার ব্যারাক কাম গ্যারেজ নির্মাণ। সাব স্টেশন ভবন এবং জাতির পিতার ম্যুরাল স্থাপন), জমির পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস, নতুন স্থাপনার জন্য অতিরিক্ত আট একর জমির ব্যয় হ্রাসসহ প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যান সংশোধন, যন্ত্রপাতির ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় নতুন যন্ত্রপাতি অন্তর্ভুক্ত করায় ব্যয় বেড়েছে।
২০১২ সালে কুষ্টিয়া ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষকে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা দিতে এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এটি একই সাথে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ও প্রধানমস্ত্রীর নির্বাচনী অঙ্গীকারও ছিল।
জানা যায় অত্যন্ত তড়িঘড়ি করে এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পটি অনুমোদনের আগে কোনও সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করা হয়নি। এমনকি গত বছর জুনে প্রকাশিত আইএমইডি-এর গভীরতার প্রতিবেদন অনুসারে ততক্ষণ পর্যন্ত কোনও জমিও নির্বাচন করা হয়নি।
প্রকল্পের ব্যয় বাড়াানো ছাড়াই এই প্রকল্পের সময়সীমা দুই দফায় ২০১৬ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু যখন প্রকল্পটি ২০১৩ সালে প্রথম সংশোধন পেরিয়েছিল তখন সময়সীমা ২০১৯ সালে নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এরপর প্রথম দফায় ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। পরবর্তী সময়ে ব্যয় বাড়িয়ে ৬১১ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত (তিন বছর বৃদ্ধি) মেয়াদ বৃদ্ধি করে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন করা হয়। প্রস্তাবটি ২০১৮ সালের ২১ জুন একনেকে অনুমোদন পায়।
সূত্র জানায়, দ্বিতীয় সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৭৪২ কোটি টাকা এবং মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করে প্রস্তাব পাঠানো হয়। গত বছরের ১২ মার্চ প্রথম পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পুনর্গঠিত ডিপিপিতে প্রথম পিইসি সভার সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে পালন না করায় গত বছরের ২৬ আগস্ট প্রকল্পটির ওপর দ্বিতীয় পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৬৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০২৩ সালের জুনে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব একনেক বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগেও বিষয়টি নিয়ে আইএমইডি বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করে। সেখানে অনিয়ম পাওয়া যায়। এ বিষয়য়ে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল জানতে চাইলে পরকিল্পনা কমশিনরে সদস্য (র্আথ-সামাজকি অবকাঠামো বভিাগ) আবুল কালাম আজাদ ঐ সময়ে বলেন প্রতিবেদনটি এবং প্রকল্পরে পরে চাকরি সমাপ্তকরণ সহ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
“তবে প্রকল্পের নানা ত্রæটি এখনও রয়ে গেছে,” তিনি জানিয়েছিলেন।
আইএমইডি তার প্রতবিদেনে ২৫ টি দুর্বল পয়েন্টর উল্লেখ করা হয়। বলা হয় যার মধ্যে অদক্ষ দক্ষ অদক্ষ ঠিকাদার ও তাদের অবহেলার কথা বলা হয়েছে।
এটি আরও উল্লখে করে যে ভবন নিমার্ণে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। যার কারনে ১ জানুয়ারী ২০১৯ সালে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধ্বসে যায় এবং ১ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
যদিও দায়বদ্ধ ঠিকাদারকে দুই বছর ধরে গণপূর্ত বিভাগের বিড প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে বাধা দেয়া হয়েছিল, তবুও প্রকল্পটির কাজ অব্যাহত ছিল এবং দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য কেউ বাধ্য ছিল না।
Leave a Reply