দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
কণ্ঠশিল্পী আব্দুল জব্বারের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মরমী-বরেণ্য এ শিল্পী ২০১৭ সালের এই দিনে ইহলোক ত্যাগ করেন। বাংলা গানে তার অবদান অনবদ্য কাব্যের মতো। শুধু গানে নয় ; অনবদ্য সঙ্গীতের বাইরে গিয়েও। বীর মুক্তিযোদ্ধা তিনি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী হিসেবে তার ছিল অনন্য ভূমিকা।
আব্দুল জব্বার ১৯৩৮ সালের ১০ ফেব্রæয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি মেট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি সঙ্গীতের তালিম গ্রহণ করেন ওস্তাদ ওসমান গনি এবং ওস্তাদ লুৎফুল হকের নিকট।
১৯৫৮ সাল থেকে তৎকালীন পাকিস্তান বেতারে তালিকাভুক্ত হন। তিনি ১৯৬২ সালে প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য গান করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে তিনি বিটিভির নিয়মিত গায়ক হিসেবে পরিচিতি পান।১৯৬৪ সালে জহির রায়হান পরিচালিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম রঙ্গিন চলচ্চিত্র সংগমের গানে কণ্ঠ দেন। ১৯৬৮ সালে এতটুকু আশা ছবিতে সত্য সাহার সুরে তার গাওয়া "তুমি কি দেখেছ কভু" গানটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। একই বছর ঢেউয়ের পর ঢেউ ছবিতে রাজা হোসেন খানের সুরে "সুচরিতা যেওনাকো আর কিছুক্ষণ থাকো" গানে কণ্ঠ দেন। রবীন ঘোষের সুরে তিনি পীচ ঢালা পথ (১৯৭০) ছবিতে "পীচ ঢালা এই পথটারে ভালবেসেছি" এবং নাচের পুতুল (১৯৭১) ছবির শিরোনাম গান "নাচের পুতুল"-এ কণ্ঠ দেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ও প্রেরণা যোগাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে অনেক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন আব্দুল জব্বার। তার গানে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধের সময় ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়য়ের সঙ্গে মুম্বাইয়ের বেশ কয়কটি স্থানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে কাজ করেছিলেন আব্দুল জব্বার। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত 'সালাম সালাম হাজার সালাম', 'জয় বাংলা বাংলার জয়'সহ অনেক দেশাত্মবোধক গানে কণ্ঠ দিয়ে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিলেন। তার গাওয়া 'তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়', 'সালাম সালাম হাজার সালাম' ও 'জয় বাংলা বাংলার জয়' গান তিনটি ২০০৬ সালে বিবিসি বাংলায় শ্রোতা জরিপে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় স্থান করে নিয়েছিল।
১৯৭৮ সালে সারেং বৌ চলচ্চিত্রে আলম খানের সুরে "ও..রে নীল দরিয়া" গানটি দর্শকপ্রিয়তা পায়। ২০১৭ সালে এই সঙ্গীত শিল্পীর প্রথম মৌলিক গানের অ্যালবাম কোথায় আমার নীল দরিয়া মুক্তি পায়। অ্যালবামটির গীতিকার মোঃ আমিরুল ইসলাম, সুরকার গোলাম সারোয়ার। একই বছরে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা গানের অ্যালবামের কাজ শুরু করেন। গীতিকার আমিরুল ইসলাম রচিত " বঙ্গবন্ধু দেখেছি তোমায় দেখেছি মুক্তিযুদ্ধ " শিরোনামের গানটিতে কণ্ঠ দেয়ার আগেই তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে অ্যালবামের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
কণ্ঠশিল্পী হিসেবে বাংলা গানে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৮০ সালে একুশে পদক ও ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি