সূত্র, দ্য ডেইলি স্টার/
সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে মিতব্যায়িতার কারণে সরকারের প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বেঁচে গেছে।
মহামারির ইতিবাচক প্রভাব হিসেবে বিভিন্ন খাতে সরকারি খরচ কমানোর সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার পেছনে সাত হাজার ৩২২ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। এর আগের বছর এই খাতে মোট খরচের চেয়ে পরিমাণটি এক হাজার ১৪৫ কোটি টাকা কম। মহামারির কারণে রাজস্বের পরিমাণ অনেক বেশি কমে আসায় সরকার অতি জরুরি নয় এমন খরচ কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়।
গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে এই মিতব্যায়িতা পরবর্তী অর্থবছরেও বজায় থেকেছে।
গত অর্থ বছরের বাজেট অনুমোদন পাওয়ার পর অর্থ মন্ত্রণালয় উন্নয়ন ও রাজস্ব খাতে যানবাহন ক্রয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
তবে অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রজ্ঞাপনটি সংশোধন করা হয় এবং জানানো হয়, প্রয়োজনে যানবাহন কেনা যাবে। কিন্তু তার জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি প্রয়োজন হবে।
২০২০-২১ অর্থবছরে যানবাহন ক্রয়ের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ছয় হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত অর্থবছরের শেষে এই বরাদ্দ থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা খরচ হয় এবং এর ফলশ্রুতিতে সরকারের প্রায় পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেঁচে যায়।
চলতি অর্থবছরে সরকার যানবাহন কেনার জন্য নয় হাজার ৪০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। গত জুলাই মাসে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, তহবিলের কেবলমাত্র অর্ধেক খরচ করা যাবে।
অর্থাৎ গত বছরের মার্চে দেশে করোনা মহামারি আক্রমণ করার পর থেকে এ যাবৎ এই খাতে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বেঁচে গেছে।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সাবেক গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে গাড়ি কেনা ও এর জ্বালানি বাবদ খরচ কমে গেছে।
সরকারি ব্যয় পর্যালোচনা কমিটির সাবেক সদস্য জায়েদ বলেন, 'ব্যয় কমলেও পরিচালনায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সুতরাং ভবিষ্যতে এই খরচ আরও কমিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে সরকারের কাছে।'
সাধারণত উন্নয়ন বাজেটের আওতায় পাওয়া বরাদ্দের একটি অংশ গাড়ি কেনার জন্য ব্যয় করা হয়। প্রকল্প শেষ হলে ওই যানবাহনগুলো সরকারের পরিবহন পুলে ফিরিয়ে দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু কর্মকর্তারা প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও গাড়িগুলো ব্যবহার করতে থাকেন।
অপরদিকে, উপসচিব থেকে শুরু করে সকল সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ভর্তুকিসহ ঋণ সুবিধা পেয়ে থাকেন। এই ঋণ সুবিধার মাধ্যমে গাড়ি কেনা স্বত্বতেও তারা প্রকল্পের জন্য কেনা গাড়িও ব্যবহার করেন।
এই পরিস্থিতিতে সরকার নতুন একটি আইন করে জানিয়েছে, উপসচিবদের গাড়ি কেনার জন্য ঋণ পেতে হলে তাদেরকে এই পদে অন্তত তিন বছর চাকরি করতে হবে।
অর্থনীতিবিদরা জানান, যানবাহনগুলো সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যবহার করা হলে এই খাতে সরকারি খরচ আরও কমানো যেতে পারে। যখন একটি নতুন প্রকল্প শুরু হয়, তখন পুরনো গাড়িগুলো আবারও ব্যবহার করা যেতে পারে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম জানান, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) আছে।
তিনি বলেন, 'যানবাহনসহ প্রতিটি উপকরণ ক্রয়ের পেছনের যুক্তি ও প্রয়োজনীয়তাকে পিইসি'র বৈঠকে মূল্যায়ন করা উচিত। কারণ এগুলো জনগণের টাকায় কেনা হয়।'
তিনি বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করবেন বলেও জানান।
একজন অর্থনীতিবিদ বলেন, খরচ কমানো খুবই জরুরি, বিশেষ করে মহামারির সময়ে। কারণ সরকারকে সংকটের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা থেকে বের হয়ে আসতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।
একটি আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, দেশের সব নাগরিককে টিকার আওতায় আনতে সরকারের প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এ ছাড়াও অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে সরকার বিভিন্ন ধরণের প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করেছে।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি