December 23, 2024, 12:12 am
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সগ্রাম ও অর্জনের দীর্ঘ প্রেক্ষাপটের পেছনে বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব আরো একটি নাম। যখনই বাংলার মুক্তি, মুক্তির নায়ক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কথা বলা হবে
তখনই অনিবার্যভাবে যে নামটি চলে আসবে সেটি হলো বেগম ফজিলাতুন্নেসার নাম। তাঁর সারা জীবনের সকল ভুমিকা যোগ করেই বাংলার জনগণ তাকে ‘বঙ্গমাতা’ উপাধিতে ভূষিত
করেছে। বঙ্গবন্ধুর জীবনে বঙ্গমাতা যেমন আলোকবর্তিতা, তেমনি আমাদের স্বাধীনতা ও দেশের মানুষের জন্য তার অবদান অনন্য অবিস্মরনীয়। তাই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যত বেশি আলোচনা হবে,
বঙ্গমাতার অবদান তত বেশি উদ্ভাসিত হবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার নাম চিরভাস্বর। সর্বজন শ্রদ্ধেয় মহিয়সী এ নারীর ৯১ তম আজ জন্মদিন। জন্মদিনে তাঁর প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বাংলার মানুষের কাছে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার নাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় তো বটেই বঙ্গবন্ধুর
পুরো রাজনৈতিক জীবনে ছায়ার মতো পাশে ছিলেন তিনি। সে কারণেই একটি জাতির মনে স্বাধীনতার স্বপ্ন বপণ করে এর স্বাদও এনে দিতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার রাজনৈতিক দর্শন ও
আদর্শকে বাস্তবায়ন করতে পেছন থেকে কাজ করেছেন শেখ মুজিবের প্রিয় রেণু। বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলাদেশ যেমন একই সূত্রে গাঁথা, তেমনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবও পরস্পর অবিচ্ছেদ্য নাম।
ইতিহাস বলে ১৯৬৬ সনের ছয় দফা আন্দোলনের পক্ষে জনসমর্থন আদায় ও জনগণকে উদ্ধুদ্ধ করতে লিফলেট হাতে রাস্তায় নেমেছিলেন বঙ্গমাতা। এসময় তিনি নিজের অলংকার বিক্রি করে
সংগঠনের প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের নেপথ্যেও ছিল তার সঠিক দিক নির্দেশনা। আন্দোলনের উত্তাল সময়গুলোতে নিজ বাড়িতে পরম
মমতায় নির্যাতিত নেতা-কর্মীর আত্বীয় স্বজনদের আপ্যায়ন করতেন, সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনে ব্যাবস্থা নিতেন। আশাহত নেতাকর্মীরা খুঁজে পেতেন আশার-আলো, আন্দোলনের
জ্বালানি আসতো বেগম মুজিবের আশাজাগানিয়া বক্তব্য থেকে। শহীদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যক্তিগতভাবে অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন তিনি। স্বাধীনতার পর বীরাঙ্গনাদের উদ্দেশ্যে বঙ্গমাতা
বলেন, ‘আমি তোমাদের মা।’ অনেক বীরাঙ্গনাকে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিষয়ে দিয়ে সামাজিকভাবে মর্যাদাসম্পন্ন জীবনদান করেন তিনি। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি
ইতিহাসের কালজয়ী মহানায়ক শেখ মুজিবের অনুপ্রেরণাদায়ীনী হয়ে পাশে ছিলেন।
এক দীর্ঘ আপোষহীন লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে শেখ মুজিবুর রহমান থেকে বঙ্গবন্ধুতে পরিণত হওয়া, বঙ্গবন্ধু থেকে একজন জাতির পিতা এবং বিশ্ব বরেণ্য রাষ্ট্রনায়কে
পরিণত হওয়ার পেছনে যার অবদান অনস্বীকার্য তিনি হলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে’ বঙ্গবন্ধু তাকে রেণু নামে সম্বোধন করেছেন।
আত্মজীবনীর রেণু ব্যক্তি নারীর প্রয়োজনসমূহ অবদমিত করে দেশপ্রেমের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আত্মস্থ করে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর জীবনের মূলমন্ত্র। নেপথ্যের প্রেরণাদাত্রী এই মহীয়সী নারী
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক আন্দোলন ও সংগ্রামে নিজেকে যুক্ত করে নিয়েছিলেন।
‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থটিও বঙ্গবন্ধু রচনা করেছিলেন এই মহীয়সী নারীর অনুপ্রেরণায়।
আর তাই আত্মজীবনীর প্রারম্ভে তিনি লেখেন, ‘আমার সহধর্মিণী একদিন জেলগেটে এসে বলল, “বসেই তো আছ, লেখ তোমার জীবনের কাহিনী।“ বললাম, “লিখতে যে পারি না; আর এমন
কি করেছি যা লেখা যায়! আমার জীবনের ঘটনাগুলি জেনে জনসাধারণের কি কোনো কাজে লাগবে? কিছুই তো করতে পারলাম না। শুধু এটুকু বলতে পারি, নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য
একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি।“ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর এ সকল অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বীরাঙ্গনাদের বিয়ের ব্যাবস্থা করে তাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব পালন করেন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালো রাত্রিতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতা বিরোধীরা। খুনিদের বুলেটের আঘাতে নির্মমভাবে শহীদ হন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
আজ রোববার বঙ্গমাতার ৯১তম জন্মবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালন করবে আওয়ামী লীগ।
Leave a Reply