December 22, 2024, 12:19 pm
বিশেষ প্রতিবেদক/
অপ্রতিরোধ্য এক আইনভঙ্গকারী আওয়ামী লীগ নেতার সন্ধান পাওয়া গেছে কুষ্টিয়াতে। যাকে নিবৃত করা যাচ্ছেই আইন বিরোধী ও জন স্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ দোজালি ভেজাল গুড় উৎপাদনের মতো একটি কাজ থেকে। কয়েকবার আইনের আওতায় আনা হলেও থামানো যায়নি তাকে। তার প্রকাশ্য উক্তি হলো তিনি ক্ষমতা নিয়ে চলেন ও সবাইকে ম্যানেজ করে এ সব করে থাকেন।
এই তিনি হলেন দিলীপ বিশ্বাস। যিনি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য ও উপজেলার পৌর আওয়ামী লীগের এক অংশের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (প্রস্তাবিত)। কোনো আইনের তোয়াক্কা করেন না তিনি। লোক- সমাজ ও জনস্বাস্থ্য নিয়ে তার মাথা ব্যথা নেই। একেবারে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে খোকসাতে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালনা করে আসছেন ভেজাল গুড়ের কারখানা, উৎপাদিত এ ভেজাল গুড়ের কারবার চলছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
পুলিশ ধরেছে, র্যাব ধরেছে, সাজা হয়েছে ভ্রাম্যমান আদালতে, বিচার হয়েছে আদালতে; হয়েছে জেল জরিমানা। তারপরও অপ্রতিরোধ্য তিনি। থেমে থেকে কিছুদিন পরই আবার শুরু করেন তিনি একই কারবার। তার প্রতিষ্ঠানের নাম দিলীপ ট্রের্ডাস। খোকসা উপজেলার থানার পশ্চিম পাশে থানার গা ঘেষে চলছে এটি।
গত শনিবার রাতে আবারও এমন একটি অভিযান চালানো হয়েছে তার ভেজাল গুড়ের কারখানায়। এবার র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটিলিয়ন-১২, কুষ্টিয়া। সাথে ভ্রাম্যমান আদালত। এবারের অভিযানে কারখানার দু’কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে ; জব্দ করা হয়েছে ভেজাল গুড় তৈরির কাজে ব্যবহৃত ৫০০ বস্তা চিনি, ক্ষতিকর নানা রাসায়নিক সহ নানা উপকরণ এবং সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু কোন জরিমানা করা হয়নি এবং এবার গ্রেফতারের বাইরে রয়ে গেছেন দিলীপ বিশ্বাস।
জানা গেছে, গত বছর কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের একটি ভ্রাম্যমান আদালত সেখানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছিল এক লাখ টাকা। এছাড়াও, এক মাস করে জেলা দেওয়া হয়েছিল দিলীপ বিশ্বাস ও তার ছোটভাই রাজকুমার বিশ্বাসকে। একই সঙ্গে কারখানাটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয় খোকসা থানায়। ঐ মামলায় কুষ্টিয়ার একটি আদালতে তিন মাসের জেল হয় দিলীপের। জেল থেকে বেড়িয়ে এসে গতবছরেরই সেপ্টেম্বর থেকে আবার চালু করেন কারখানা।
খোকসা থানা সূত্র বলছে দিলিপ, তার ভাই রাজকুমার ও আরেক ভাই ষষ্ঠী বিশ্বাসের বির“দ্ধে খোকসা থানাতে এ পর্যন্ত সাতটি মামলা রের্কড রয়েছে।
যেভাবে ‘গুড়’ তৈরি হয় সেখানে
ঐ কারখানাতে ‘আখের গুড়’ তৈরি করা হয়ে। আখের গুড় তৈরি করতে আখের রস লাগবেই। কিন্ত, এখানে আখের রসের কোনো বালাই নেই। জানা গেছে সেখানে গুড় তৈরির প্রধান উপাদান পুরানো গুড় ও ময়দা। নির্দিষ্ট মাত্রায় ময়দা ও পুরানো গুড়ের সঙ্গে পানি ও চিনি মিশিয়ে চুলায় নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় জ্বালিয়ে মিশ্রণ তৈরি করা হয়।
অভিযোগে জানা গেছে ওই মিশ্রণের সঙ্গে কাপড়ে দেওয়া লাল রঙ (মিনা রঙ) ও নানা রাসায়নিক পদার্থ যার অন্যতম হলো হাইড্রোজ মিশিয়ে গুড় তৈরি হয়। পরে ওই গুড় মাটির গামলা ও চিটাগুড়ের বাক্সে ভরে ঠান্ডা করা হয়।
আরো অভিযোগ রয়েছে কখন কখন সেখানে পুরানো গুড়ের পরিবর্তে চিটা গুড় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চিটাগুড় সাধারণতো কালচে লাল হয়ে থাকে। চিটাগুড় থেকে গুড় তৈরিতে রঙের ব্যবহার করা না হলে গুড়ের রঙ গুড়ের মতো হবে না। এই ক্ষতিকর রঙের ব্যবহার হয়ে থাকে শ্রমিকদের ইচ্ছে মতো। রঙের পর ব্যবহার করা হয় ফিটকিরি। যাতে করে গুড়ের রঙয়ে সাদাটে ভাব আসে।
ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সবুজ হাসান জানিয়েছেন, পুরো প্রক্রিয়ার কোনো স্তরেই স্বাস্থ্যসম্মত বলে কিছুই নেই।
তিনি আরও জানিয়েছেন, কারখানাটিতে প্রতি সপ্তাহে কয়েক টন গুড় তৈরি হচ্ছিলো। এই গুড়ের অন্যতম ক্রেতা ছিলেন সাভার, কেরানীগঞ্জ, রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নরসিংদী, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা।
Leave a Reply