October 30, 2024, 8:02 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক, ঝিনাইদহ/
ঝিনাইদহে নাম সর্বস্ব ৩৬টি এনজিও ২০২০-২১ অর্থবছরের সরকারের বিশেষ অনুদান বরাদ্দ পেয়েছে। সমাজসেবা ও মহিলা অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৩৬টি এনিজিওর মধ্যে প্রায় ৩০টিরই নেই অফিস,মালিক ছাড়া দ্বিতীয় কোন কর্মচারি। একেক জনের আবার রয়েছে একাধীক এনজিও। জানাগেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের বিশেষ অনুদান হিসাবে দেশের ৭৮১টি এনজিও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকা পেয়েছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ জেলার ২২ টি এনজিও পেয়েছে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অন্যদিকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে ২০২০-২১ অর্থ বছরে সরকারে বিশেষ অনুদান পেয়েছে দেশের ৬৮২টি এনজিও।
এর মধ্যে ঝিনাইদহের রয়েছে ১৪টি। ঝিনাইদহের একই এনজিওর নাম তালিকায় ২ বার দিয়ে মোট ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঝিনাইদহ শহরের পার্কপাড়ার ঠিকানা দেওয়া রয়েছে সুপ্রভাত মহিলা ও শিশু উন্নয়ন সংস্থার। সরজমিনে খোঁজ করতে দেখাগেল।এক মাস আগে বরাদ্দের সংবাদ পেয়ে একটি অফিস নিয়েছেন এনজিওর সেক্রেটারি ও প্রধান নির্বাহী জেসমিন আক্তার।
তিনি ছাড়া আর কোন কর্মকর্তা নেই এই এনজিওর। জেসমিন আক্তার জানান এটি ছাড়াও তার আরও একটি এনজিও আছে ঘোমটা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা নামে সদর উপজেলার কালীচরণপুর ইউনিয়নে।সেটি তার ছেলের বউ দেখা শোনা করেন। জেসমিন আক্তার তার দুইটি এনজিওর নামে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে ২ লাখ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে আরও ১ লাখ টাকা পেয়েছেন। গত অর্থ বছরে তিনি ৫০ হাজার টাকা পেয়ছেন। তিনি প্রতিবেদককে জানিয়েছেন লাখে ৩০ হাজার করে খরচ হয়েছে তার।১ বছরের মধ্যে তিনি ঝিনাইদহ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক ডাঃ জাহিদের উপস্থিতিতে পৌর এলাকা ও কালীচরণপুরে সাবান,স্যানিটাইজার,শিশু খাদ্য বিতরণ করেছেন।এত দিন পৌরসভার পিছনে বাড়িতেই একটি কক্ষে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।
জানাগেছে মাগুরাতেও নার দুটি এনজিও রয়েছে। এই বরাদ্দ তালিকায় সেই দুটি এনজিওর নামও রয়েছে। পাশেই থানার সামনে রয়েছে ডিজেবল ডিভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন(ডিডিও) নামের আরেকটি এনজিও। তিনি বাসার সাথেই একটি র“মে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ভাগ্যবান এই ব্যক্তি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকেই একই ঠিকানা,একই এনজিওর নামে ২টি বরাদ্দ পেয়েছেন।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে পেয়েছে আরও ৭৫ হাজার। গত বছরও তিনি বরাদ্দ পেয়েছিলেন। সরজমিনে খোঁজ করতে গিয়ে বন্ধ অফিসে নক করলে লুঙ্গি খুলে প্যান্ট পরে এসে অফিসে বসেন তিনি। তার টেবিলে দুটি টেবিল ও একটি শোকেচ আছে। যা অন্যদের নেই। আপনার কয়জন কর্মকর্তা কর্মচারী আছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ডিসি অফিসে দেওয়া আছে সেখান থেকে নিয়ে নেন। ডিসি অফিসে আছে আর আপনার অফিসে নেই এমন প্রশ্ন করলে তিনি কথা বলতে রাজি নন বলে জানান।
এরপরে শহরের নতুন হাটখোলার এলাহী বক্স রোডে বৈশাখী যুব মহিলা উন্নয়ন সংস্থার ঠিকানায় গেলে দেখা যায় যেখানে সাইনবোর্ড দেওয়া আছে সেখানে দই বিক্রি করা হ”েছ। দোকানের আরেকটি শাটার বন্ধ। দইয়ের দোকানের সাথে আলাদা পার্টিশন নেই। এখানেই রয়েছে একটি সেলফ ও একটি চৌকি। সেটাই নাকি এই সংস্থার অফিস। তিনি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে ৭৫ হাজার ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে ৫০ হাজার টাকার অনুদান পেয়েছেন। দুই বছর পরে তিনি এই বরাদ্দ পেয়েছেন বলে জানান।
তালিকায় থাকা, অতিক্রম মহিলা সমিতি,ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন,ডেভেলপমেন্ট একটিভিটিস ও সোসাইটি,হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট,কালীগঞ্জ উপজেলা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা,পরিচয় মহিলা উন্নয়ন সংস্থা,মায়ের দোয়া স্বপ্নপূরণ মহিলা উন্নয়ন সংস্থা,পল্লী জননী সমাজ কল্যাণ সংস্থা,র“রাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি,জয়ীতা মহিলা কল্যাণ সংস্থা, সুন্দরপুর মহিলা ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা,উষা সমাজ কল্যাণ সংস্থা,রংধনু মহিলা উন্নয়ন সংস্থা,আলোকিত সমাজ কল্যাণ সংস্থা সহ অনেক এনজিও নাম সর্বস্ব। শোবার ঘর অথবা অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই একটি ছোট্ট ব্যানারে এনজিওর নাম লিখে রেখে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে অসাধু কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে বরাদ্দ নেন। শুধু মাত্র বরাদ্দ নেওয়ার জন্যই এই সব এনজিও খুলে রেখেছেন।
মাঠে তাদের বাস্তবে কোন কার্যক্রম নেই। এমন অভিযোগ অফিসের পাশেই বসবাসকারীদের। একই তালিকায় কেন ডিডিও এনজিওর নাম রয়েছে, এমন প্রশ্ন উত্তর জানতে চাইলে সিভিল সার্জন সেলিনা বেগম মিটিংয়ে আছেন বলে পরে কথা বলবো বলে রেখে দেন। ঝিনাইদহ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ পরিচালক ডাঃ জাহিদ হাসান বলেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের তালিকায় নাম আসা ২টি এনজিওর জন্য তিনি সুপারিশ করেননি। তারা কিভাবে বরাদ্দ পেয়েছে তা জানেন না তিনি।
তিনি বলেন,আপনি যদি সৃজনী ও সিও এনজিওর মত ঝকঝকে চকচকে অফিস এই এনজিওর ঠিকানায় খুঁজতে জান তাহলে হবে না। অফিস খরচ চালানোর জন্যই এই সমস্ত ছোট এনজিও গুলিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এইরকম না করলে এরা উঠবে কি করে। মন্ত্রণালয়ের ২ বিভাগের অনুদানেই একই এনজিওর নাম রয়েছে এমন প্রশ্ন করে তিনি জানান, আমরা সিভিল সার্জন অফিসের সাথে সমন্বয় করে সুপারিশ করিনি।আমরা আমাদের মত পাঠিয়েছি,তারা তাদের মত পাঠিয়েছে।
Leave a Reply