দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
কুষ্টিয়ার ট্রিপল মার্ডারের অভিযুক্ত এএসআই সৌমেন কুমার রায় আদালতে দোষ স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন প্রচন্ড রাগের মাথায় তিনি এ কাজ করেছেন। তবে ৭ বছরের শিশুটিকে হত্যা করা তার অপরাধ ছিল। এজন্য তিনি অনুতপ্ত বলে জানিয়েছেন। সোমবার (১৪ জুন) দুপুর ১টা ৩০ মিনিট থেকে ৪.৩০ মিনিট পর্যন্ত অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিমের আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার-ইন-চার্জ (তদন্ত) নিশিকান্ত সাহা নিশ্চিত করেছেন।
জবানবন্দী শেষে বিচারক সৌমেনকে জেলে পাঠানোর নিদের্শ দেন।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফরহাদ হোসেন খান জানিয়েছেন তিনজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সৌমেনকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। তিনি জানান তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।
আদালতে সৌমেন নিজেকে নিহত আসমার স্বামী বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন তিনি আসমাকে দু’বছর আগে বিয়ে করেন। তবে বিয়ের স্বপক্ষে তিনি কোন প্রমাণ দেখিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে ঐ পুলিশ কর্মকর্তা জানান সৌমেন বলেছেন তিনি যথাসময়ে আদালতে প্রমানাদি হাজির করবেন।
সৌমেন দাবি করেন তিনি আসমাকে খুলনা নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে তা রাজি হয়নি। এতে তিনি রাগান্বিত ছিলেন। সৌমেন মনে করছিলেন আসমা এটা করছে ঘটনায় নিহত শাকিল খানের কারনে। সৌমেনের সন্দেহ ছিল শাকিল খানের সাথে আসমার কোন সম্পর্ক গড়ে উঠে। যার কারনে সে শাকিলের দেয়া পরামর্শ মোতাবেক চলাফেরা করছিল।
ঘটনার দিন তিনি আসমাকে বারবার জিজ্ঞেস করেছিলেন শাকিলের সাথে তার কি সর্ম্পক। যখন আসমা এসব বিষয়ে নিরবতা পালন করছিল তখন তিনি “সবগুলোকেই শেষ করে দেব” বলে পিস্তল বের করে গুলি করেন।
তিনি আদালতে জানান ছোট বাচ্চাটিকে তিনি খুন করতে চাননি। কিন্তু এক পর্যায়ে সেটি হয়ে গেছে।
তিনি বিনানুমতিতে তার কর্মস্থল ত্যাগ করেন বলেও আদালতে জানান। সার্ভিস পিস্তল ও বুলেট নিয়ে আসেন বলেও স্বীকার করে নিয়েছেন।
রবিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শহরের কাস্টমস অফিসের সামনে সৌমেন প্রকাশ্য গুলি করে হত্যা করে তিনজনকে। নিহতরা হলেন আসমা খাতুন (২৫), তার সাত বছরের ছেলে রবিন ও শাকিল হোসেন (২৮) নামে আসমার এক বন্ধু। সৌমেন রায় খুলনার ফুলতলা থানায় কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি মাগুরা জেলায়। তিনি একসময় কুষ্টিয়ায় কর্মরত ছিলেন।
এ ঘটনায় নিহত শাকিলের বাবা মেজবার রহমান বাদী হয়ে এএসআই সৌমেন রায়কে আসামি করে গতকাল রাতে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন। অন্যদিকে আরেকটি মামলা করেন আসমা মা হাসিনা খাতুন। দুটি মামলাতেই সৌমেন একক আসামী।
নিহত ওই নারীর বাড়ি কুমারখালীর নাটুরিয়া গ্রামে। তবে তারা কুষ্টিয়া শহরে থাকতেন।
নিহতদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে পুলিশ নিশ্চিত নয় বলে দাবি করে রবিবার।
“যেহেতু সৌমেন আদালতে দাবি করেছেন আসমা তার স্ত্রী, তাই এ বিষয়ে পুলিশের কিছু বলার নেই,” জানান কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফরহাদ হোসেন খান।
তবে আসমার মা ও পরিবারের সদস্যরা দাবি করে আসছিলেন কুষ্টিয়ায় চাকরিকালে সৌমেনের সঙ্গে আসমার পরিচয় হয়। দুই বছর আগে সৌমেন তাকে বিয়ে করেছিলেন।
অন্যদিকে নিহত শাকিলের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সাঁওতা গ্রামে। তিনি বিকাশের স্থানীয় একজন এজেন্ট।
এদিকে এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় এএসআই সৌমেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
রবিবার রাতে খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মাহবুব হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, তার বিরুদ্ধে আইনিসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কর্মস্থল ফুলতলা থানা থেকে ছুটি না নিয়েই সৌমেন গতকাল সকালে কুষ্টিয়ায় গিয়েছিলেন। বিনা অনুমতিতে কর্মস্থল ত্যাগ ও আগ্নেয়াস্ত্র-গুলি বহন করায় খুলনা রেঞ্জের ডিআইজির নির্দেশে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, সৌমেন রায় ২০১৫ সালে কনস্টেবল থেকে এএসআই পদে উন্নীত হন। পরে ২০১৬ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানায় যোগ দেন। সেখান থেকে জেলার অন্যান্য থানায়ও কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ মিরপুর থানার হালসা ক্যাম্পে ছিলেন। এরপর বাগেরহাট হয়ে খুলনার ফুলতলা থানায় যোগ দেন।
সোমবার দুপুরে তিনটি মরদেহই তাদের পরিবারের কাঠে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের জানাযা সম্পান্ন হয়েছে।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি