জহির রায়হান সোহাগ, চুয়াডাঙ্গা/
কাকলী ও মাসুমের ৯ মাস হয়েছিল বিয়ে। এর মধ্যেই স্বামী অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে কাকলীর। পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে সে। কিন্তু স্বামী ! তাকে হত্যা করতে হবে। হত্যা করতে পারলেই প্রেমিক মুকুল তাকে বিয়ে করবেন, এমন সংকল্পেই মত্ত ছিলেন কাকলী। সে মোতাবেক স্যালাইনের সঙ্গে ঘুমের ওষধ ও বিষ মিশিয়ে স্বামীকে হত্যার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন তিনি।
কাককলীকে গ্রেফতারের পর বিষয়টি এভাবেই বলছিলেন দর্শনা থানার ওসি মাহবুর রহমান কাজল।
শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার সড়াবাড়ীয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে মুমূর্ষু অবস্থায় স্বামী মাসুদ রানাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের সদস্যরা।
জানা যায়, ঘটনার পর পরিবারের সদস্যরা কাকলীকে আটক করে রাখেন। ওই দিনই রাত সাড়ে ১২টার দিকে মাসুদ রানার মা মমতাজ খাতুন বাদী হয়ে দর্শনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত কাকলীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের হরিহরনগর গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের মেয়ে কাকলী খাতুনের সঙ্গে ৯ মাস আগে দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের সাড়াবাড়িয়া গ্রামের পালপাড়ার আবদুল কাদের মন্ডলের ছেলে মাসুদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের মাস কয়েক পরেই সাড়াবাড়িয়া গ্রামের স্কুলপাড়ার উসমান মোল্লার ছেলে মুকুলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন কাকলী।
পরে মুকুলের পরামর্শে স্বামীকে হত্যাচেষ্টার পরিকল্পনা শুরু করেন কাকলী। মাসুদকে ঘুমের ওষুধ ও বিষ খাইয়ে দেন কাকলী। এতে মাসুদ বমি করতে শুরু করেন। অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে করেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাসুদ রানা বলেন, আমাদের বিয়ের ৯ মাস পর থেকে একটি ছেলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা ও চ্যাট করত কাকলী। বিষয়টি প্রথমে বুঝতে না পারলেও চার দিন আগে বুঝতে পারি। এ নিয়ে কাকলীর সঙ্গে আমার তর্কবিতর্ক হয়। শুক্রবার দুপুরে চাষাবাদ শেষে বাড়ি ফিরি আমি। এ সময় তার দেওয়া স্যালাইন খেয়ে কয়েকবার বমি হলে অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে পেছন থেকে কাকলী একটি ওড়না দিয়ে আমার গলায় জড়িয়ে টান দেয়। আমি ঝাটকা মেরে ফেলে তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পেছন থেকে আমার মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে কাকলী।
অভিযুক্ত কাকলী খাতুন পুলিশকে বলেন, কয়েক মাস ধরে মুকুলের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমার স্বামী মাসুদকে হত্যা করতে পারলেই মুকুলকে বিয়ে করব, তাই মাসুদকে হত্যার পরিকল্পনা করি আমরা। মুকুল দুদিন আগে ঘুমের ওষুধ কিনে দেয় আমাকে। শুক্রবার দুপুরের স্যালাইনের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ ও আগে থেকেই সংগ্রহ করে রাখা রাসায়নিক সার মিশিয়ে খাইয়ে দিই।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, মাসুদ বিষ পান করেছেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানান। পরে তাকে ওয়াশ করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুর রহমান কাজল বলেন, রাতেই অভিযান চালিয়ে কাকলী খাতুনকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বামীকে হত্যাচেষ্টার কথা স্বীকার করেছেন। মূল পরিকল্পনাকারী মুকুলকে ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মাসুদ রানার মা মমতাজ বেগম বাদী হয়ে রাতেই দর্শনা থানায় একটি মামলা করেছেন।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি