জাহিদুজ্জামান/
এক সময়ের কৃতি ওয়েট লিফটার রতন পাল। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের পতাকা পত-পত করে উড়িয়েছেন, বাজিয়েছেন জাতীয় সংঙ্গীত। ভারোত্তোলনে তার ঝুলিতে রয়েছে জাতীয় পর্যায়ে ৮টি রেকর্ডসহ ১৬টি স্বর্ণ, ৩১টি রোপ্য আর ১২টি ব্রোঞ্জ আর আন্তর্জাতিক ২টি পদক। বডিবিল্ডার্সেও মিস্টার বাংলাদেশ খেতাবধারী কুষ্টিয়ার এই কৃতি খেলোয়াড় রতন কুমার পাল ভাল নেই। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না, সংসারও চলছে টানাটানিতে।
কুষ্টিয়া শহরের রাজারহাট এলাকার দুই কক্ষ বিশিষ্ট ছোট একটি বাড়ীতে এক ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস রতন পালের। অন্ধকার স্যাতস্যাতে ঘরে তিনি সাজিয়ে রেখেছেন তার গৌরবোজ্জ্বল দিনের আলোকচিত্র ও অর্জনের পদক-সনদ। এগুলোতে চোখ রাখলেই সেই উজ্জ্বল দিনগুলোতে ফিরে যান রতন পাল। তার মনে সবই জ¦লজলে। ১৯৮১ সাল থেকে ২০০০ সাল। টানা ২০ বছর তিনি শাসন করেছেন ভারোত্তোলনের কোর্ট। ১৯৮৫ সাল থেকে আনসারের হয়ে জাতীয় পর্যায়ে একের পর এক পদক জিতেছেন। এক সময় যার অসাধারন ক্রীড়া নৈপুন্য হাজারো মানুষের দৃষ্টি আবদ্ধ করে রেখেছিল, যিনি দেশের জন্য বয়ে এনেছিলেন রাষ্ট্রীয় সম্মান; অসুস্থতা আজ তাকে উপহাস করছে। অতিরিক্ত ভারোত্তোলনের জন্য তার হাঁটুর হাড় ক্ষয়ে গেছে। বিপুল অর্থ ব্যয়ে কৃত্রিম হাঁটু সংযোজন করিয়েছেন অনেকদিন আগেই। পরে নানান রোগ বাসা বেঁধেছে শরীরে। এখন আর ঠিকমত কথাও বলতে পারেননা। লাঠিভর দিয়ে সামান্য একটু হাটতে পারেন।
অস্পস্ট উচ্চারণে রতন পাল বলেন, পা বাকা হয়ে গেলে ভারতের ভেলোর থেকে অপারেশন করা হয়েছিল। তখনই আমার সব জমানো টাকা এবং সম্পত্তি শেষ হয়ে যায়। পরে দুই বার স্ট্রোক হয়েছিল। তখন জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে দুই বার ১৫ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা দিয়েছিল। আমার এখন কিছুই করার নেই। বসে পেপার পড়ি, খবর দেখি। সংসার ঠিকমতো চালাতে পারছি না, ছেলে হিসাববিজ্ঞানে চতুর্থ বর্ষে পড়ছে। তার পড়ার খরচও দিতে পারি না। কুষ্টিয়া জিমন্যাস্টিক ক্লাব থেকে মাঝে মধ্যে ১/২ হাজার করে টাকা দেয়। অন্যরাও কিছু টাকা দেয়। এসবে আমার চলে না। চিকিৎসাও ভালমতো করাতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি চিকিৎসার জন্য সহায়তা চান।
রতন পালের স্ত্রী যুথিকা রানী পাল বলেন ২০ বছর ধরে তিনি বিছানায় পড়ে আছেন। হাটতে পারেন না, নিজ হাতে খেতেও পারেন না। তিনি এখন অসহায়। সংসার চালাবেন কী করে। তিনি দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন। এখন তার বিপদেও রাষ্ট্রকে সহায়তা করা উচিৎ।
সরকারীভাবে রতন পালকে পৃষ্ঠপোষকতা করার আহবান জানিয়েছেন অন্য খেলোয়াড়রাও। রতন কুমার পালকে তার নিজের ক্লাব কুষ্টিয়া জিমনাস্টিক ক্লাব থেকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। ক্লাবের সভাপতি মো: আব্দুল মজিদ বাবু বলেন, রতন পাল এই ক্লাবের গর্ব। তাকে সার্কের লৌহ মানব বলা হতো। জিমনাস্টিক ক্লাব তার পাশে আছে, সামর্থ অনুযায়ী তাকেসহ অন্য অসহায় খেলোয়াড়দের আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট অনুপ কুমার নন্দী বলেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। তার মতো কৃতি খেলোয়াড়কে এখনে অন্যের সহায়তার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক। অনুপ নন্দী বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার অর্থ সহয়তা দেয়া হয়েছে, তবে তা সামান্য। নতুন করে অর্থ সহয়তা দেয়ার জন্য প্রস্তাবনাও দেয়া হয়েছে। এটা বছরে একবার। আসলে তার মাসে একটা অ্যামাউন্ট দরকার। এ জন্য জাতীয় ক্রিড়া পরিষদ বা ক্রিড়া মন্ত্রী মহোদয়ের দৃষ্টিতে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন অ্যাডভোকেট নন্দী।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি