জাহিদুজ্জামান/
কুষ্টিয়ার কুমারখালী ও খোকসায় ৫দিনের ব্যবধানে দুটি দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত ১০ ও ১৫ এপ্রিল দুটি ঘটনাই ঘটেছে দুপুরে যখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে এর মালিক খাবার খেতে বাড়িতে যান। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দুটির উপরের চালার টিন কেটে ভেতরে প্রবেশ করে চোরের দল। পুলিশ বলছে, চোর ধরতে জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু পর পর একই ধরণের দুটি চুরির ঘটনায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোস প্রকাশ করেছেন।
প্রথম ঘটনাটি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার গোপগ্রাম বাজারে। সেখানকার ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং এর রুমের টিন কেটে ভিতরে ঢুকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে যায় চোরের দল। সাংবাদিক জাহিদুজ্জামানকে এই প্রতিষ্ঠানের মালিক আব্দুল হালিম মৃধা জানান, প্রতিদিনের মতো তিনি বেলা দেড় টার দিকে বাড়িতে খাবার খেতে যান। বাড়িতে গিয়ে এজেন্ট ব্যাংকের সিসি ক্যামেরা অফ দেখেন। সেসময় তিনি ভাবেন বিদ্যুৎ গেছে অথবা নেটওয়ার্কে সমস্যা হয়েছে। যথারীতি বেলা সাড়ে ৩ টার দিকে এসে রুম খুলে দেখেন সবকিছু এলোমেলো। স্টিলের ড্রয়ারে রাখা ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা উধাও। ওইদিনই থানায় অভিযোগ দিলে খোকসা থানা পুলিশ এসে সব দেখে যান। হালিম মৃধা বলেন, স্টিলের ড্রয়ার ভাংতে না পেরে কাঠের ড্রয়ার ভেঙে চোরদল সেখান থেকে চাবি দিয়ে স্টিলের ড্রয়ার খুলে টাকা নিয়ে যায়। তারা সিসি ক্যামেরার সব যন্ত্রপাতিও নিয়ে যায়। এ কারণে ভিডিও দেখতে পারেন নি- বলেন হালিম। তিনি বলেন, এ ঘটনার পর একবারই পুলিশ এসেছিল, আর কোন খোঁজ নেয়নি।
এ বিষয়ে খোকসা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার সাংবাদিক জাহিদুজ্জামানকে বলেন, ব্যাংক এজেন্টের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। চোর ধরার জোর চেষ্টা চলছে। ওইসময় কোন কোন দোকান খোলা ছিলো তাদের সঙ্গে কথা বলে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
এর ৫দিন পর একই রকমের আরেকটি ঘটনা ঘটে ১৫/১৬ কিলোমিটার দূরে, কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের মধুপুর বাজারে। সেখানকার মেসার্স মুসকান এন্টারপ্রাইজ নামের দোকান ঘরে চারজন চোর ঢোকে চালের টিন কেটে। সাংবাদিক জাহিদুজ্জামানকে দোকান মালিক মিজানুর রহমান বলেন, দুপুরে ১টার দিকে দোকান বন্ধ করে মোটরসাইকেলে দেড় কিলোমিটার দূরের বাড়িতে যান। প্রতিদিনের মতো যোহরের নামাজ আদায় ও দুপুরের খাবার খেয়ে দোকানে এসে দেখেন চালের টিন কাটা। ঘরের সবকিছু অগোছালো ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে। ক্যাশ বাক্সের তালা ভেঙে প্রায় নগদ দেড় লক্ষ টাকা ও বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির আরো দেড় লক্ষ টাকার ক্রাচ কার্ড নিয়ে গেছে। পরে সিসি ক্যামেরায় এদের দেখা গেছে। চোরের দলটি অপরিচিত, স্থানীয় কেউ তাদের চিনতে পারেনি।
মিজানুর রহমান বলেন, সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওতে চোর ও চুরির স্পষ্ট চিত্র থাকলেও চোর সনাক্ত করা যায়নি। ঘটনার পর থেকে কয়েকবার থানায় গিয়ে তাদের চাহিদামতো ভিডিও দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ১৭ এপ্রিলও পেনড্রাইভে করে আরো ভিডিও দিয়ে এসেছি। দিয়েছি লিখিত অভিযোগও।
এ ব্যাপারে কুমারখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মজিবুর রহমান বলেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরপর দিনে দুপুরে এ ধরণের দুটি চুরির ঘটনায় উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। খোকসা উপজেলার গোপগ্রাম বাজারের হাবিব টেলিকমের মো. হাবিব বলেন, দুপুরের দিকে বাজারে কাস্টমার কম থাকে। তাই আমরা গোছল করে খেয়ে আসতে বাড়িতে যাই। এই সুযোগ নিচ্ছে চোরের দল। জাহিদুজ্জামানকে তিনি বলেন, অবস্থা এমন হয়েছে যে, দিনের বেলাতেও এখন পাহারাদার রাখতে হবে।
সাংবাদিক জাহিদুজ্জামানকে বাজারের দোকানদার মো. বাহাদুর বলেন, এর আগেও বাজারে টিনের চাল কেটে কসমেটিক্স এবং মুদিখানার দোকানে চুরি হয়েছে। পুলিশ বা জনপ্রতিনিধি কেউ গা করে না। এমন হতে থাকলে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে যাবে।
সাংবাদিক জাহিদুজ্জামান এ ব্যাপারে কথা বলেন কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি হাজী রবিউল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ ধরণের ঘটনা কাম্য নয়। দিনের বেলা টিন কেটে চোর নামছে দোকানে, অবিশ্বাস্য ঘটনা। আমরা চেম্বার থেকে পুলিশ সুপারের কাছে এর প্রতিকার চাই। তিনি এ ধরণের চুরির ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, এর প্রতিকার না হলে আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি