জাহিদুজ্জামান/
কুষ্টিয়ায় ৯৯৯ এ কল করে দুর্বৃত্তদের নামে তথ্য দিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার সাবেক সেনা সদস্য আসাদুল হক এখন হুমকির ভয়ে বাড়ি থেকেই বের হতে পারেন না। তার করা মামলার আসামীরা জামিনে মুক্ত হয়ে এসে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে জিডিও করেছেন তিনি। এদিকে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ থেকে পাওয়া তথ্য ফাঁসের ঘটনায় অভিযুক্ত এসআই জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে এখনো বিভাগীয় তদন্ত চলছে। ঘটনার পরদিন থেকে তাকে কুচিয়ামোড়া পুলিশ ক্যাম্প থেকে প্রত্যাহার করে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে ক্লোজ করে রাখা হয়েছে।
ঘটনার শিকার সাবেক সেনা সদস্য আসাদুল হকের বাড়ি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াদাহ এলাকার ফয়জুল্লাপুর গ্রামে। সাংবাদিক জাহিদুজ্জামানকে তিনি জানান, গত ১২ মার্চ সকালে তার বাড়ির পাশে পদ্মা নদীতে তিনটি গুলির পেয়ে শব্দ পেয়ে বিষয়টি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে জানান। ঐ সেবা থেকে তার সঙ্গে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তার (ডিউটি অফিসার) সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থল ভেড়ামারা থানার কুচিয়ামোড়া পুলিশ ক্যাম্পের আওতায় হবার কারনে ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে যোগায়োগ করিয়ে দেন। এর ঘন্টা তিনেক পর, বেলা ১টার দিকে এসআই জাহাঙ্গীর হোসেন তাকে ফোন দেন এবং বলেন ‘তুই ফাজলামি করিস, আমি খবর নিয়ে দেখেছি এলাকায় কোনো ঘটনা ঘটেনি।’ এর কয়েক মিনিটের মধ্যে ৮ জন যুবক তার বাসায় প্রবেশ করে তাকে গালাগালি করে। রামদা দিয়ে তাকে এলোপাথারী কোপায় এবং পুলিশকে খবর দিয়েছিস বলে গালি দেয়। আসাদুলের চিৎকার শুনে পাশেই মাঠে কাজ করা কয়েকজন কৃষক ছুুটে আসলে তারা পিস্তলের ভয় দেখিয়ে পালিয়ে যায়। আহত আসাদুলকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরদিন ১৩ মার্চ ঘটনার বিবরণসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। ভেড়ামারা থানা ওই অভিযোগটি মামলা (নং ১৭/৬২) হিসেবে নথিভুক্ত করে। একই সঙ্গে অভিযুক্ত এসআই জাহাঙ্গীর হোসেনকে কুচিয়ামোড়া পুলিশ ক্যাম্প থেকে প্রত্যাহার করে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়।
৯৯৯ এ কল করে সন্ত্রাসী হামলার শিকার সাবেক সেনা সদস্য আসাদুল হক বলেন, পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিয়ে আসার পর এসআই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে জবানবন্দী নিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমাকে ডেকেছিলেন। সব শুনেছেন, এরপর আর কোন আপডেট পাইনি। আসাদুল হক বলেন, এসআই জাহাঙ্গীরের কারণেই আমি হামলার শিকার হয়েছি। লোকজন না আসলে আমাকে তো মেরেই ফেলতো। সাংবাদিক জাহিদুজ্জামানকে আসাদুল বলেন, জাহাঙ্গীর অপরাধী, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক তা আমি চাই।
আর দুর্বৃত্তদের নামে যে হামলার মামলা করেছিলাম তারা সবাই জামিন পেয়েছেন। এরা এলাকায় এসে আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আমাকে এবং আমার ভাই সিএনজি চালক বকুল শিকদারকে মেরে ফেলবে বলে বিভিন্ন লোক মারফত শুনতে পাচ্ছি বলেন আসাদুল। তিনি বলেন, হামলাকারীদের হাতে রিভলবার ছিলো যেটা পুলিশ মামলায় উল্লেখ করেনি। আসাদুল বলেন, এই আসামিদের রিমান্ডে আনলে অস্ত্র উদ্ধার করতে পারতো পুলিশ। কিন্তু তা করা হয়নি। তারা এখন সবসময় হুমকি দিচ্ছে। টেলিফোনে দেয়া হুমকির প্রেক্ষিতে গত ২৫ মার্চ ভেড়ামারা থানায় জিডি (১১৭২ নং) করেছি। পুলিশ এসেছিল তদন্ত করতে। তারা সাক্ষী চায়। টেলিফোনে দেয়া হুমকির কী সাক্ষী হয়, তারপরও মায়ের নাম দিয়েছি- বলেন আসাদুল। তিনি বলেন, হুমকির কারনে বাড়ির বাইরে যেতে ভয় পাই। মাছে মধ্যে বাড়ির কাছের একটি দোকান পর্যন্ত সর্বোচ্চ যাই।
আসাদুলের মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ভেড়ামারা থানার এসআই প্রকাশ রায় বলেছেন, আসামিদের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া যাচ্ছে। মামলার তদন্ত একেবারে শেষের দিকে। দু-এক সপ্তাহের মধ্যে চার্জশীট দিয়ে দিবেন বলে জানান তিনি। প্রকাশ রায় সাংবাদিক জাহিদুজ্জামানকে বলেন, আসামিরা নিজেরাই আদালতে আত্মসমর্পণ করে পরে জামিন পেয়েছেন। রিমান্ডে নেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা আত্মসমর্পণ করলে সাধারণত: রিমান্ডের আদেশ দেন না বিচারক।
ভেড়ামারা থানার ওসি শাহাজালাল বলেন, হুমকির ব্যাপারে বাদীর সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে ৯৯৯-এ কল করে জানানো তথ্য ফাঁসে অভিযুক্ত কুচিয়ামোড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই জাহাঙ্গীর হোসেনকে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে ক্লোজ রেখে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে। টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে এস আই জাহাঙ্গীর হোসেন এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফরহাদ হোসেন খাঁন। অন্য দুজন হলেন, ভেড়ামারা সার্কেলের দায়িত্বে থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইয়াসির আরাফাত, মিরপুর সার্কেলের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আজমল হোসেন। সাংবাদিক জাহিদুজ্জামানকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফরহাদ হোসেন খাঁন বলেন, বিভাগীয় তদন্ত চলছে, শেষ না হলে কিছু বলা যাচ্ছে না।
কথা হয় কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এসআই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাকে ক্লোজ রাখা হয়েছে। তার আর ওই ক্যাম্পে ফেরত যাওয়ার সুযোগ নেই। তদন্ত শেষে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে ভেড়ামারা থানার কুচিয়ামোড়া পুলিশ ক্যাম্প থেকে এসআই জাহাঙ্গীর হোসেনকে প্রত্যাহার করা হলেও এখনো সেখানে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। ভেড়ামারা থানার ওসি শাহাজালাল বলেছেন, সেকেন্ড ম্যান এএসআই মফিজুর রহমান দায়িত্ব পালন করছেন।
বিয়ের তথ্য গোপন রাখায় ২০১৯ সালে সেনাবাহিনী থেকে চাকরি চলে যায় আসাদূল হকের। এরপর থেকে এলাকায় ছোটখাটো ব্যবসা করেন তিনি।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি