দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার লাহিনী-সান্দিয়ারা সড়ক দীর্ঘদিন বেহাল। গত ৩/৪ বছর সাড়ে ১৫ কিলোমিটার সড়কটি ভোগান্তির কারণ হচ্ছে সংযুক্ত ৫টি ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকার মানুষের। সড়কের উপরিভাগের পিচ-পাথর-ইটের আবরণ ধুলোয় মিশে গেছে। পুরো সড়ক জুড়েই মনে হচ্ছে ইট আর বালুর মিশ্রণের ধুলো বিছিয়ে রাখা হয়েছে। গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের প্রধান খালের ওপর এই সড়কে যানবাহনের চাকায় ধুলো উড়ে দুই পাশের সবুজ পরিবেশ দূষিত করছে।
আর কমপক্ষে ৬ইঞ্চি পুরুর এই ধুলোর আবরণের নিচে অসংখ্য গর্ত। প্রতিদিনই দুর্ঘটনায় পড়ছে অটো রিক্সাসহ ছোট ছোট যানবাহন। মানুস আহত হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে মালামাল। সব যানবাহনের চালককে ঝুঁকি নিয়ে একেবারে ধীরে চলতে হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্বাবধানে টেন্ডারের মাধ্যমে সড়কটি পূন:নির্মাণের জন্য কাজ পেয়েছিলেন রাফিয়া কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড এম এম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিডেট। কুষ্টিয়া এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান ম-ল বলেন, কুমারখালীর লাহিনী-সান্দিয়ারা ১৫.৬ কিলোমিটার এবং সদরের বিত্তিপাড়া-জমজমি ১৭ কিলোমিটার সড়ক পূন:নির্মাণের জন্য তাদেরকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে মোট ৩০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর তাদের কাজ শুরু করার কথা ছিলো। অল্প কিছু মাটির কাজ করেও তারা। এরপর একদিকে করোনা মহামারী শুরু হয় অন্যদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুটির একটির মালিক ব্যক্তিগত অন্য কারণে পুলিশের কাছে গ্রেফতার হলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে কুষ্টিয়া এলজিইডি ২০২০ সালের শেষের দিকে কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন টেন্ডারের অনুমোদন চেয়ে এডিবিকে চিঠি দিয়েছে। একই সঙ্গে কার্যাদেশের অর্থ ফেরত নিতে (নগদায়ন) ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিলে তারা ঢাকা জজ কোর্টে আরবিটিশন মামলা করেছেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মামলায় বলা হয়েছে- নির্মাণ কাজের মেয়াদ ৩১ মে ২০২১ এখনো শেষ হয়নি, তাই কাজ বাতিল বা অর্থ নগদায়ন করতে পারবেন না কর্তৃপক্ষ। তবে, কুষ্টিয়া এলজিইডির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মামলা কোন ইস্যু না, সেটি তার গতিতেই চলবে। এডিবি থেকে অনুমতি পাওয়া গেলেই আবার নতুন টেন্ডারের মাধমে কাজ শুরু করা যাবে। এরমধ্যে মানুষের ভোগান্তি বিবেচনায় ভ্রাম্যমাণ রক্ষণাবেক্ষণ ফান্ড থেকে বড় বড় গর্তগুলো মেরামতের কাজ করা হচ্ছে বলেন প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান ম-ল।
লাহিনী থেকে সান্দিয়ারা সড়কটি জিকে খালের ওপর দিয়ে সান্দিয়ারা পেরিয়ে মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলার লাঙ্গলবন্ধ পর্যন্ত গেছে। স্থানীয়রা জানান, এই সড়কটি বিপুল জনগোষ্ঠীর যোগাযোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা, চাপড়া, চাঁদপুর, পান্টি ও বাগুলাট ইউনিয়ন, খোকসা উপজেলার ওসমানপুর ইউনিয়ন, ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার কিছু অংশ এবং মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলা মিলিয়ে প্রায় ১০/১২ লাখ মানুষ এই সড়কের ওপর নির্ভরশীল। এদের জন্য সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটি অনেকটা চাষ দেয়া জমির মতো। কুষ্টিয়ার লাহিনী প্রান্ত থেকে কিছুদূর এগুলেই আর সড়কের পিচ চোখে পড়বে না। জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্ত। ইটের রঙের মতো লালচে ধুলো ছড়িয়ে আছে সড়ক জুড়ে। যানবাহন গেলেই ধুলো উড়ে অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। জিকে সেচ প্রকল্পের প্রধান খালের উত্তরের পাড়ের ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সড়কটি। খাল দিয়ে বয়ে যাচ্ছে টলমলে পানি। চারিপাশে সবুজ ফসলের ক্ষেত। খালের পাড় জুড়ে বড় বড় বৃক্ষরাজি। সব মিলিয়ে এক অনিন্দ সুন্দর পরিবেশ। কিন্তু সড়কের ধুলো উড়ে নষ্ট করে দিচ্ছে সব। লাহিনী প্রান্ত থেকে ২কিলোমিটার এগিয়ে দেখা গেল ভেঙ্গে পড়ে আছে একটি ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা। এর চালক রিক্সার আসন বিছিয়ে নিচে মাথা ঢুকিয়ে শুয়ে পড়ে ভেঙ্গে যাওয়া চ্যাসিস পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি বলেন, সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী। প্রতিদিনই কোন না কোন গাড়ী ভেঙ্গে যাচ্ছে। মাসে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা ঝালাই খরচ হচ্ছে। অ্যাকসিডেন্ট হচ্ছে, অটো উল্টে যাচ্ছে। যাত্রীদের হাত-পা ভেঙ্গে যাচ্ছে। ৭ জন যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ঝাকিতে গাড়ী ভেঙ্গে পড়ার পর যাত্রীরা হেটে চলে গেছে। এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালকরা বলেন, বারবার গাড়ির পাতি ভেঙে যায়। টাকা লোকসান হয়, কষ্টও হয়। যাত্রীদেরও বিপদ হয়। তিন-চার বছর ধরে রাস্তা এভাবে ভাঙা। ভাঙার কারণে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায় না। গাড়িতে উঠলেই ঝাঁকুনি আর ঝাঁকুনি। খুবই কষ্ট হয়। রাস্তাটা ঠিক করা দরকার।
এই রাস্তার পিচ আর দেখা যায় না। ঢেকে আছে ধুলোয়। রাস্তার সব উপকরণ যানবাহনের চাকায় পিষ্ঠ হয়ে রঙিন ধুলোয় পরিণত হয়েছে। কিছুক্ষণ পরপর নির্মাণ সামগ্রীবাহী বড় বড় ট্রাক যাচ্ছে আর ধুলো উড়ে পুরো এলাকা ছেয়ে যাচ্ছে। সীমিত হয়ে যাচ্ছে দৃষ্টিসীমা।
স্থানীয়রা বলেন, তিন বছর ধরে ভাঙা রাস্তার কারণে আমরা গাড়ীতে উঠতে পারছি না। মাঝে মাঝে অটোরিক্সা মানুষসহ উল্টে পড়ছে। আমরা গিয়ে ধরে তুলি। রাস্তা খুবই খারাপ, ঠিক করা দরকার। তারা বলেন, একটানা ৪কিলোমিটার রাস্তা ভাঙ্গা। তারপর কিছুটা ভাল। আবার ভাঙ্গা।
লাহিনী থেকে ৭ কিলোমিটার এগিয়ে এক যায়গায় গর্ত এতো বড় হয়েছে যে নিচের মাটি বালু উঠে এসেছে। এর উপর দিয়েই চরম ঝুকি নিয়ে খুব ধীরে সাবধানে পার হচ্ছে যানবাহন।
এক মোটরসাইকেল আরোহী বলেন, প্রচুর ধুলা, ইটের গুড়া উড়ছে। রাস্তা একেবারে ভাঙ্গা। সব মিলিয়ে জীবন দুর্বিসহ। মাস্ক ছাড়া এই রাস্তায় যাওয়াই যায় না। মাঝে মধ্যেই মোটরসাইকেল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ৪০ মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগছে দেড় ঘণ্টা। তিনি জরুরিভাবে রাস্তা মেরামতের দাবি জানান। এক কিশোর সাইকেলআরোহী বলেন, গায়ের জোরে সাইকেল চালাতে হচ্ছে। কিছুদূর পর পর চেন পড়ে যাচ্ছে। কয়দিন আগে টিউব ফেটে গেছে।
স্থানীয়দের আশঙ্কা সামনের বর্ষা মৌসুমে ভোগান্তি বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। তার আগেই কিছু একটা করার দাবি তাদের।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, রাস্তার কাজের টেন্ডার হয়ে গেছে। ওয়ার্ক অর্ডার হলেই কাজ শুরু হবে।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি