December 22, 2024, 9:50 am
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির খুলনা আন্ত:বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা হয়েছে কুষ্টিয়ায়। শনিবার শহরের রাজারহাটে আলো কমিউনিটি সেন্টারে এ সভায় যোগ দেন খুলনা বিভাগের বেশিরভাগ অবৈধ ইটভাটা মালিক। সমিতির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- নানা অজুহাতে ইট ভাটা ভেঙ্গে দেওয়ার কারনে করানাকালীন সময়ে বেকার হয়ে কোটি কোটি শ্রমিকের জীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। কুষ্টিয়া ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সভাপতি হাজী আক্তারুজ্জামান মিঠুর সভাপতিত্বে ওই সভায় বলা হয় বর্তমানে ইটভাটাগুলি বন্ধ হয়ে গেলে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাহত হবে।
আসলে কোন অজুহাত দিয়ে নয়, সুনির্দিষ্ট আইনের প্রেক্ষিতে দেশকে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে অবৈধ ভাটাগুলিতে অভিযান চালানো হচ্ছে। রাষ্ট্রের আইন বাস্তবায়নকারী বিভিন্ন সংস্থা যেমন জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, এলিট ফোর্স র্যাব এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সম্পূর্ণ আইনসিদ্ধভাবে অবৈধ ভাটামালিকদের শাস্তি দেয়া হয়। এখানে অজুহাতের কোন প্রশ্নই ওঠেনা। বরং ভাটামালিকরাই নানা অজুহাতে বিভিন্ন দপ্তরকে ম্যানেজ করে প্রতিবছরই অবৈধ ভাটা চালিয়ে আসছে। আর শ্রমিকদের বেকার হয়ে পড়ার যে আশঙ্কার কথা বলেছেন অবৈধ ভাটা মালিকরা তা আসলে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন তারা। শ্রমিকদের ইস্যু সামনে রেখে অবৈধ ভাটা চালিয়ে বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক হচ্ছে তারা। আর অবকাঠামো উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে বলে যে আশঙ্কার কথা বলছে এই মালিক সমিতি সেই চিন্তা সরকার আগেই করে রেখেছে। সরকার পোড়ানো ইটের ব্যবহার বন্ধে ব্লকের ব্যবহার বাড়াতে উৎসাহ দিচ্ছে। এমনকি ঘোষণা করা হয়েছে প্রণোদনা এবং সহজ ঋণ সুবিধা। তাই এ ব্যাপারটিও একটি অজুহাত মাত্র।
২০১৩ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক সংশোধিত আইন এর ৮(ঙ) ধারা পরিবর্তন করায় আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে ভাটার মালিকগণ নিবন্ধন করতে পারেনি উল্লেখ করা হয়েছে ওই সভায়।
আসলে দেশকে পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতেই দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর আইন প্রণেতারা ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯) করেছেন। এতে বলা হয়েছে- উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন, জ¦ালানি সাশ্রয়ী এবং বায়ুদূষণকে নির্ধারিত মানমাত্রার মধ্যে রাখতে সক্ষম হবে এমন অবকাঠামোকেই ইটভাটা বলা হবে। আর জেলা প্রশাসকের দেয়া লাইসেন্সছাড়া কোন ব্যক্তি ইটভাটা স্থাপন করতে পারবেন না। (ক) আবাসিক, সংরক্ষিত বা বানিজ্যিক এলাকা, (খ) সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, (গ) সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি (ঘ) কৃষি জমি (ঙ) প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (চ) ডিগ্রেডেড এয়ার শেড এর অভ্যন্তরে ভাটা বসানোর লাইসেন্স কেউ দিতে পারবে না। এছাড়াও এসবের এক কিলোমিটারের মধ্যেও ভাটা করা যাবে না। এমনকি রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে ভাটা থাকতে পারবে না। আইনের এসব শর্ত না মেনে ভাটা বসিয়ে ইট পুড়িয়ে পরিবেশ দূষণকারীরা নিশ্চয় আইন অমান্যকারী। সেই আইন অমান্যকারীরাই সরকারকে হুমকি দিয়েছেন ইটভাটায় অভিযান অব্যাহত থাকলে, আগামী ৪ঠা ফেব্রুয়ারি খুলনা বিভাগের ১০টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও স্বারকলিপি প্রদান করবেন। আর ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালীন সময়ে খুলনা বিভাগের সমস্ত ইট ভাটা মালিকগণ তাদের ইট বিক্রি ও সরবরাহ বন্ধের ডাকও দিয়েছেন। এখন দেখার বিষয় সরকার এই অবৈধ এবং আইন অমাণ্যকারী ভাটামালিকদের হুমকির প্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেন।
Leave a Reply