December 22, 2024, 10:15 am
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
কুষ্টিয়া অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে ধানের চারা রোপন জনপ্রিয় করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় ৫০ হেক্টর জমিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে ধানের চারা রোপন ও কর্তনের একটি পাইলট প্রজেক্ট উদ্ধোধন করা হয়েছে গত বুধবার। উদ্ধোন করেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন। সেখানে ১৫০ জন কৃষক উপ¯ি’ত থেকে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সুবিধার বিভিন্ন দিক সর্ম্পকে ধারনাও নিয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন পদ্ধতিটি জনপ্রিয় করতে তারা জেলা ব্যাপী উদ্যোগ গ্রহন করেছে।
কর্মকর্তারা জানান এই যন্ত্র একসাথে ১২টি চারার ট্রে বহন করে এবং এই প্রক্রিয়ায় একসাথে ৬ লাইনে ধানের চারা রোপণ করা যায়। সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে কমপক্ষে চার জন শ্রমিককে কাজ করতে হয়। এতে করে কৃষকদের অধিক মুজুরি গুনতে হয়। এই যন্ত্র দিয়ে এক ঘন্টায় ০.৩৫ হেক্টর জমির ধান রোপণ করা যায়। জ্বালানি খরচ ঘণ্টায় সাতশ’ গ্রাম। প্রতি হেক্টর জমিতে ২০ জন শ্রমিকের সাশ্রয় হয়। এ যন্ত্র দিয়ে ধানের চারা রোপণ করলে কৃষকের সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে। চারা রোপণে যন্ত্রটি ব্যবহার করলে রোপণ খরচ ৫০-৭৫ ভাগ কমানো সম্ভব হবে। এ ছাড়া রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে চারা রোপণ করলে লাইন সোজা হয়। ফলে পরবর্তীতে আগাছা নিংড়ানো, সার ও কীটনাশক ছিটানো ও ধান কাটা সহজ হয়।
কৃষির আধুনিকায়নে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় রবি মৌসুমে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সরকার। দেশে দ্রতগতির নগরায়ন ও শিল্পায়ন কৃষি শিল্পে শ্রমিক সংকট সৃষ্টি করছে। এ কারণে অর্থনীতির প্রাণ কৃষিখাতে প্রতি বছর শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে। এই সংকট প্রায় তীব্রতর হয়ে ওঠে ধান রোপণ ও কাটার মৌসুমে। শ্রমিক সংকটের কারণে অনেক সময় ধান মাঠেই পড়ে থাকে। এ সংকট থেকে দেশের কৃষিখাতকে বাঁচাতে খামার যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়া জেলাতে মিরপুর উপজেলায় ৫০ হেক্টর জমিতে এ যন্ত্র দিয়ে ধান রোপণ কর হযেছে। তিনি জানান রাইস ট্রান্স প্লান্টার মেশিন, কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনে ক্রয়ে সরকার কৃষকদের সহযোগিতা করছে।
স্থানীয় মহদীপুর গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান বলেন তিনি মনে করছেন এই যন্ত্রে কম খরচ ধান রোপণ করা সম্ভব। তিনি জানান তিনি দেখতে পাচ্ছেন একটি জমিতে ধানের চারা রোপন করলে শ্রমিকের খরচ যদি ৬শ’ টাকা হয়, সেখানে এই মেশিং দিয়ে যদি ধান রোপন করি তাহলে খরচ হবে দেড়শ’ টাকা।
আরেক উজ্জল কৃষক বলেন, ধান রোপন থেকে ধান মাড়াই সবই এই যন্ত্রে করা হলে সেটা অবশ্যই সাশ্রয় বয়ে নিয়ে আসবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন জেলায় “রাইস ট্রান্সপ্লান্টার” এর সুফল ও সুবিধা সম্পর্কে কৃষকদের অবগত করা হ”েছ। এ যন্ত্র দিয়ে ধানের চারা রোপণ করে এর সুফল সম্পর্কে কৃষকদের অবগত করে তাদেরকে যন্ত্রটি ব্যবহারে উৎসাহী করা হ”েছ। কৃষকরাও আগ্রহভরে যন্ত্রটির ভালোমন্দ পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা এ যন্ত্রটি ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
তিনি জানান এই যন্ত্রের দাম কয়েক লাখ টাকা। তবে মেশিন ক্রয়ে সরকার কৃষকদের আর্থিক সহায়তা করছে। যদিও প্রান্তিক সকল কৃষকের পক্ষে তা ক্রয় করা সম্ভব না। তবে সচেতনতা সৃষ্টি করা গেলে সামর্থ্যবান কৃষকরা তা ক্রয় করতে আগ্রহী হবেন। এতে অন্য কৃষকরা তা ভাড়া নিয়ে তাদের ক্ষেতের ধানের চারা রোপণ করতে পারবেন।
তিনি যৌথভাবে কৃষকদের এই যন্ত্র ক্রয়ে উদ্ধুব্ধ করার কথা সরকার ভাবছে বলে জানান।
Leave a Reply