December 22, 2024, 4:08 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
হাইকোর্টের তলবের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (জানুয়ারি ২৫) সশরীরে উপস্থিত হয়েছেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম তানভীর আরাফাত। এর আগে রোববার আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে অনুতপ্ত হয়ে আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করেন এসএম তানভীর আরাফাত।
বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
আবেদনে কুষ্টিয়ার এসপি জানিয়েছেন, তিনি ম্যাজিস্ট্রেটকে চিনতে পারেননি। তাই এমন অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়েছে। ভবিষ্যতে তিনি দায়িত্ব পালনে আরও সতর্ক হবেন। এ ধরনের ভুল আর কখনো হবে না।
আবেদনে তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগের জন্য আমার মনে সর্বোচ্চ সম্মান রয়েছে। কোনো অবস্থাতেই বিন্দুমাত্র অসম্মান দেখানোর কথা দূরে থাক, বরং বিচার বিভাগের দেওয়া কাজে নিয়োজিত হতে পারলে নিজেকে সম্মানিত বোধ করি। এ ঘটনায় আমি মনের গভীর থেকে অনুতপ্ত। এ জন্য আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্বরত এক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার’ করার ঘটনায় গত ২০ জানুয়ারি এসপি তানভীরকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া আদালত অবমাননার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।
হাইকোর্ট বলেছিল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা ও আইন অনুযায়ী ভোটকেন্দ্রে বিচারিক দায়িত্ব পালন করছিলেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসান। কিন্তু দায়িত্বরত একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে ওই পুলিশ সুপার যে আচরণ করেছেন তা আদালত অবমাননার শামিল। উনার (এসপি) এই কর্মকাণ্ড শুধু বিচার প্রশাসনে হস্তক্ষেপই নয়, বরং পুরো বিচার বিভাগের প্রতি প্রচণ্ড আঘাতের সামিল। উনার এই কর্মকাণ্ডকে আমরা (আদালত) এড়িয়ে যেতে পারি না। এ ছাড়া এটাকে হালকাভাবে নেওয়ারও সুযোগ নেই। উনি শুধু গুরুতর আদালত অবমাননাই করেননি, বিচার বিভাগের ভাবমূর্তিকেও ক্ষুণ্ন করেছেন।
তাহির“ল ইসলাম বলেন, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে একই জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: মহসিন হাসানের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় কুষ্টিয়া জেলার পুলিশ সুপারকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৫ জানুয়ারি তাকে আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
এর আগে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ করেন তিনি। নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা অভিযোগের কপিটি ্য প্রয়োজনীয় ব্যব¯’া গ্রহণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে পাঠানো হয় যার অনুলিপি আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের আইজির দফতরেও পাঠানো হয়।
অভিযোগে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসান জানান গত ১৬ জানুয়ারি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে একটি ভোট কেন্দ্রে এই দুর্ব্যবহার করেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভির আরাফাত।
আবেদনে ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসান বলেন ‘কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে ১৪ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এরপর ১৬ জানুয়ারি তার দায়িত্বপালন অবস্থায় সকাল ১০টায় ভেড়ামারা পাইলট মডেল উ”চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অব¯’ানকালে জনৈক ভোটারের অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন। সেখানে কতিপয় ব্যক্তিকে ভোটকেন্দ্রের বুথের ভেতর লম্বা বেঞ্চে পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে বসে থাকতে দেখে তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে বললে তারা পরিচয়পত্র না দেখিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারের স্বাক্ষরিত এ-ফোর সাইজের কাগজ দেখান।’
‘ম্যজিস্ট্রেটের অভিযোগ তিনি সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসারকে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বুথের বাইরে ডাকেন। কথা বলা শুরু করতেই ওই ভোটকেন্দ্রে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতসহ ৪০-৫০ জন ফোর্সসহ প্রবেশ করেন। তিনি প্রবেশ করেই প্রিসাইডিং অফিসারকে উচ্চস্বরে তলব করেন। তাৎক্ষণিক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন ফোর্স প্রিসাইডিং অফিসারকে তার সাথে কথা বলতে না দিয়েই তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপাচাপি করেন। তখন তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে দেন এবং প্রিসাইডিং অফিসারের সাথে একটি বিষয়ে কথা বলছেন বলে জানান এবং কথা শেষ হলে উনাকে নিয়ে যেতে বলেন। এরপরও এএসপি মোস্তাফিজুর রহমান ধমক দিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারকে তার সামনে থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত তার দিকে অগ্রসর হন এবং জিজ্ঞেস করেন আপনি কে? কী করেন এখানে?’
ম্যাজিস্টেট অভিয্গো করেন “আমি আমার পরিচয় দিলে তিনি আরও ক্ষিপ্তস্বরে বলেন, ‘আপনি এখানে কী করেন? বেয়াদব, বের হয়ে যান এখান থেকে।’ আমি পুলিশ সুপার ও তার ফোর্সদের আক্রমণাত্মক চরম অসৌজন্যমূলক ও মারমুখী আচরণে হতচকিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকি। এরপর এসপিসহ তার সঙ্গী ফোর্সরা আমার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে উদ্দেশ্য করে একাধিকবার বলেন, এসব লোককে পাঠায় কে? বেয়াদব ছেলে। এখানে কাজ কী আপনার? বের হয়ে যান এখান থেকে। তারা কেন্দ্র থেকে চলে যাওয়ার পর আমি বিষয়টি ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করি।’
আবেদনে বলা হয়েছে, ‘পুলিশ সুপার ও তার সঙ্গী ফোর্সদের আচরণ স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর ৬৯,৭০,৭৪,৮০ ও ৮১ বিধির সরাসরি লঙ্ঘন। তাই প্রয়োজনীয় ব্যব¯’া গ্রহণের জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে।
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হবার পর তার উচ্চ কতৃপক্ষ তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন অভিযোগ দায়ের করতে এবং তিনি তা করেছেন।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত জানান তিনি এ বিষয়ে সংবাদিকদের সাথে কথা বলবেন না। এসপি এও বলেন বিষয়টি তার (জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসানের) উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে তিনি বিষয়টি নিষ্পত্তি করে নিয়েছেন।
Leave a Reply