December 22, 2024, 10:03 am
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
দীর্ঘদিন শরীরের নানা সংকটের সাথে যুদ্ধ করে পরাস্ত হলেন নাট্যজন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকের। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গন, বিজ্ঞাপনী খাতের অনন্য মানুষ। যার সমসাময়িকে তিনিই সেরা।
শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) ভোরে চলে গেলেন চির প্রস্থানে। তার বয়স হয়েছিল ৭৬। পেছনে রয়ে গেলেন স্ত্রী নাট্যজন সারা যাকের, ছেলে নাট্যাভিনেতা ইরেশ যাকের, মেয়ে রেডিও উপস্থাপক শ্রিয়া সর্বজায়াসহ অসংখ্যক ভক্ত-অনুরাগী।
প্রায় চার বছর ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন আলী যাকের। তবে পাত্তা দিয়েছেন কখনও কখনও দেননি। ক্যান্সারকে জয় করেই ছুটে এসেছিলেন মঞ্চে। অভিনয়ও করছিলেন।
সম্প্রতি তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে গত ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার সিসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
আলী যাকেরের জন্ম ১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের রতনপুর ইউনিয়নে। ছোট পর্দায় ও মঞ্চে সমানভাবে জনপ্রিয় ছিলেন তিনি।
১৯৭২ সালের আলী যাকের আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। এরপর তিনি ওই বছরের জুন মাসে আতাউর রহমান ও জিয়া হায়দারের ডাকে সাড়া দিয়ে যোগ দেন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে। যেখানে তিনি আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন।
এক বছর তিনি প্রথমবারের মতো নির্দেশনা দেন বাদল সরকারের ‘বাকি ইতিহাস’ নাটকটিতে। যা ছিল বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনী।
মঞ্চে তার অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘বিদগ্ধ রমণী কুল’, ‘তৈল সংকট’, ‘এই নিষিদ্ধ পল্লীতে আলী’, ‘দেওয়ান গাজীর কিস্সা’, ‘সৎ মানুষের খোঁজে’, ‘অচলায়তন’, ‘কোপেনিকের ক্যাপ্টেন’, ‘ম্যাকবেথ’, ‘টেমপেস্ট’, ‘নূরলদীনের সারাজীবন’, ‘গ্যালিলিও’।
টেলিভিশনের পর্দাতেও আলী যাকের ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। হুমায়ূন আহমেদের ‘বহুব্রীহি’ ও ‘আজ রবিবার’-এ অভিনয় করে তিনি তুমুল দর্শকপ্রিয়তা পান। একক নাটক ‘একদিন হঠাৎ’, ‘নীতু তোমাকে ভালোবাসি’, ‘পাথর সময়’, ‘অচিনবৃক্ষ’, ‘আইসক্রিম’, ‘গণি মিয়ার পাথর’-এ অভিনয় করেও তিনি দর্শকপ্রিয়তা পান।
অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও। ‘আগামী’, ‘নদীর নাম মধুমতী’, ‘লালসালু’ ও ‘রাবেয়া’ চলচ্চিত্রে তার অভিনয় দাগ কেটেছে মানুষের হৃদয়ে।
আলী যাকের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সদস্য। ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদক এবং মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেছেন।
Leave a Reply