দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতুর প্রতিরক্ষা বাঁধের ধস আরো বড় হয়েছে। প্রায় দুই হাজার ব্লক চলে গেছে গড়াই নদীতে। এদিকে ধসের জন্য দায়ী করা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজার মেশিন আবার আনা হয়েছে ওই জায়গায়। বালু তুলে ভরাট করা হচ্ছে অদূরের ব্যাক্তি মালিকানার জলাশয়। এ ক্ষেত্রে জলাধার সংরক্ষণ আইনও মানা হয়নি।
প্রায় দেড় মাস আগে কুষ্টিয়া শহর লাগোয়া শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতুর প্রায় ৮০ মিটারের মধ্যেই প্রতিরক্ষা বাঁধে ধস শুরু হয়। এখনও তা অব্যাহত আছে। সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা এলাকাবাসীর।
কুষ্টিয়া শহর লাগোয়া শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতুর প্রতিরক্ষা বাঁধের ধস অব্যাহত আছে। সেতুর অদূরে গড়াই নদীর মাঝ বরাবর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) খননযন্ত্রে বালু তোলা হয়েছে।
প্রায় দেড় মাস আগে সেতুর ১০০ মিটার ভাটিতে হরিপুর প্রান্তে প্রতিরক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। এরপর সিমেন্টের ব্লক নদীতে চলে যেতে থাকে। সেতুর প্রায় ৮০ মিটারের মধ্যেই বাঁধ থেকে নদীতে নামার সিঁড়িটি পুরোপুরি ধসে গেছে। ওই এলাকায় ধস এখনও অব্যাহত আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ হোসেন জানান, প্রতিদিনই নতুন নতুন ব্লক ধসে যাচ্ছে। ব্লকের নিচে কোনো জিও ব্যাগ নেই। শিগগির জিও ব্যাগ ফেলে ধস ঠেকানো দরকার। তা না হলে সেতুটি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়বে।
গড়াই নদীর ওপর শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতু নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালে এই প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
এলজিইডির কুষ্টিয়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘আপাত দৃষ্টিতে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, যেখানে ধস নেমেছে, ওই জায়গা বরাবর নদীতে পাউবোর একটি ড্রেজার দাঁড়ানো ছিল তিন দিন।’
তিনি আরও জানান, নিচ থেকে বালু সরে গিয়ে এই জায়গায় ধস শুরু হয়। প্রতিরক্ষা বাঁধের ডিজাইনে নদীর বেডে নদীর দিকে দুই মিটার এবং বাঁধের দিকে দেড় মিটার করে জিও ব্যাগ ফেলা হয়।
কিন্তু ধসে যাওয়া ব্লকের নিচে কোনো জিও ব্যাগ দেখা যাচ্ছে না কেন, জানতে চাইলে জাহিদুর রহমান বলেন, স্কাউরিংয়ে বালুর বস্তা নদীতে সরে গিয়ে থাকতে পারে।
তিনি আরও বলেন, কুষ্টিয়া অফিস থেকে পাঠানো প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান প্রকৌশলীর দফতর তার কাছে আরও কিছু তথ্য চেয়েছে। তিনি পাঠিয়েছেনও। তিনি আশা করছেন, শিগগির ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ দল আসবে। সংস্কারের ব্যাপারে তারাই সিদ্ধান্ত দেবে।
এদিকে নতুন করে ধসের এই জায়গা বরাবর মাঝ নদীতে ড্রেজারে বালু তোলা হচ্ছে। সেখান থেকে পাইপের মাধ্যমে সেতুর হরিপুর অংশের শেষ মাথা বরাবর মো. আনোয়ার হোসেন ও তার শরিকদের ডোবা জমিতে বালু ফেলা হয়েছে।
আনোয়ার হোসেন পাউবোতে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। ড্রেজার মেশিনের পাইপ লাইন স্থাপনের শ্রমিকদের সুপারভাইজার। তিনি বলেন, ‘পাউবো নদী থেকে তোলা বালু ফেলার জায়গা পাচ্ছে না। তাই আমাদের অনুরোধ করলে আমরা ডোবা ভরাট করতে রাজি হয়েছি।’
কুষ্টিয়ায় পাউবোর ড্রেজার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তাজমীর হোসেন বলেন, প্রায় ৬০০ কোটি টাকার গড়াই নদী খনন ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ চলছে। তৃতীয় বছরের মতো এবারও শুষ্ক মৌসুমের খনন শুরু হয়েছে। খননের জন্য টাস্কফোর্স কমিটির উদ্যোগে যৌথ সার্ভে করা হয়েছে।
সার্ভে অনুযায়ী, নদীর ৪৪ কিলোমিটার খনন শুরু হয়েছে। এখানে শুধু শেখ রাসেল সেতু নয়, অনেকগুলো সেতু রয়েছে। সেতুর যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই কাজ চলছে। সেতুর অনেক দূরে নদীর মাঝ বরাবর খনন চলছে।
তাজমীর বলেন, ‘আমরা যে ড্রেজার দিয়ে কাজ করছি, তা আধুনিক মানের। এটি নদীর তলদেশের মাটি ডিজাইন মোতাবেক কেটে এগোতে থাকে। এতে ধসে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
এলজিইডির কুষ্টিয়া নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান মণ্ডল বলেন, এর আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ওই জায়গায় কিছু করা যাবে না। লোক পাঠিয়ে বিষয়টি দেখে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে।
সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬০৪ মিটার ও প্রস্থ ৬ দশমিক ১ মিটার। এটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৭৮ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে সেতুটি উদ্বোধন করা হয়।
প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী- কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। তারপরও আপনারা কেন নদী পাড়ের জলাশয় ভরাট করছেন? এ প্রশ্নের জবাবে কুষ্টিয়ায় পাউবোর ড্রেজার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তাজমীর হোসেন বলেন, ভাল কিছুর জন্য ছোট ছোট ছাড় দিতে হয়। গড়াই নদীর নাব্য ঠিক রাখতে জলাশয় ভরাট করা ছাড়া কোন উপায় নেই। কারণ পাড়ে বালু-মাটি রাখলেও গড়িয়ে নদীতে চলে আসে এমন সমালোচনা হয়।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি