December 23, 2024, 12:13 am
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
কুষ্টিয়ায় এনআইডি জালিয়াতি করে অন্যের জমি আত্মসাৎ মামলায় গ্রেফতার আমিরুল ইসলাম আদালতে চাঞ্চল্যকর জবানবন্দি দিয়েছে। সিআইডির তদন্তে আমিরুলের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। আমিরুলকে মূল জমির মালিক এমএম ওয়াদুদ সাজিয়ে নকল এনআইডি তৈরি করা হয়। তাকে রেজিস্ট্রারের সামনে ওয়াদুদ বলে হাজির করে চক্রের সদস্যরা। সোমবার সকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দেলোয়ার হোসেনের আদালতে এ জবানবন্দি দেন আমিরুল ইসলাম। আমিরুলের বাড়ি সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া গ্রামে। বাবার নাম মৃত আবুল হোসেন বিশ্বাস।
জবানবন্দিতে আমিরুল বলেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলামের মিলপাড়া হরিশংকপুরের বাসায় বসে জমি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত বাবু মেম্বারসহ অন্যরা দেখা করেন। এ সময় আমিরুলসহ তার এলাকার দুই নারীকে রবিউল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। সেখানে তাদের বাড়ি করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি ছাড়াও নগদ ১ লাখ টাকা করে দেয়া হবে বলে জানানো হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আবুল হোসেন জানান, ‘তদন্তে আমিরুল ইসলাম নামে একজনের সম্পৃক্ততা উঠে আসে। তাকেই নকল ওয়াদুদ সাজিয়ে এনআইডি তৈরি করা হয়। তার ফিঙ্গার ব্যবহার করা হয় কার্ডে। রেজিস্ট্রি অফিসেও আমিরুলকে উপস্থাপন করা হয়। ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে সে আদালতে নানা তথ্য দিয়েছে। প্রভাবশালী কয়েকজনের নাম এসেছে তার জবানবন্দিতে। এখন সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে বিচারক দেলোয়ার হোসেনের খাস কামরায় আমিরুল জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে সে নিজেকে ভাতের হোটেল ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেয়। তার এলাকার প্রতিবেশী ভাই ফারুকের মাধ্যমে মজমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার আসাদুর রহমান বাবুর সঙ্গে পরিচয় হয়।
আমিরুল জানায়, কিছুদিন পর বাবু মেম্বার তাকে ও একই গ্রামের আনজিরা, পিনজিরাসহ কয়েক মহিলাকে নিয়ে কুষ্টিয়া রেজিস্ট্রি অফিসে যায়। তাকে একটি স্ট্যাম্পে সই করতে বললে সে সেখানে টিপসই দেয়। পরে মিষ্টি খেতে তাকে ১ হাজার টাকা দেয়া হয়।
সর্বশেষ ঈদুল আজহার দুই সপ্তাহ আগে বাবু ও হাসান আমিরুল ও পিনজিরাকে নিয়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বাড়ি মিলপাড়ায় নিয়ে যায়। তার সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর বাবু মেম্বার চেয়ারম্যান রবিউলকে বলে: এদের দিয়ে চলবে কি না। তখন চেয়ারম্যান বলেন, চলবে। এরপর বাবু বলেন, তোমাদের বাড়িঘর হয়ে যাবে, এ জন্য প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা দেব। আমিরুল বলেন, পরে জানতে পারি, আমাদের নাম ব্যবহার করে জালিয়াতি করা হয়েছে। এর আগে জমি ক্রেতা মহিবুল ইসলামের জবানবন্দিতেও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি হাজী রবিউলের নাম উঠে এসেছে।
জমি জালিয়াতির বিষয়টি সামনে আসার পর কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ মামলা হওয়ার আগেই কয়েক প্রতারককে আটক করে। এরপর মামলা হয়। পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত জমি জালিয়াতির মূল চক্রকে গ্রেফতার করতে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করেন।
সর্বশেষ জমি জালিয়াতির ঘটনায় ১৭ জনকে আসামি করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করেন জমির মালিক এএমএম ওয়াদুদ। এ মামলায় পুলিশ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে এজাহার নামীয় ৯ জন।
Leave a Reply