December 22, 2024, 12:15 pm
দৈনিক কষ্টিয়া প্রতিবেদক/
কুষ্টিয়া শহর লাগোয়া গড়াই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ধসে যাচ্ছে। শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতুর ১০০মিটার ভাটিতে হরিপুর প্রান্তে সিমেন্টের ব্লক খুলে নদীতে চলে যাচ্ছে। সেতুটি নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালে এই প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর- এলজিইডি।
রবিবার দুপুরে প্রতিরক্ষা বাঁধের ধসে যাওয়া অংশ পরিদর্শন করেন স্থানীয় একটি বেসরকারি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী এম এ হাফিজ অভি। সেখান থেকেই তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ব্লকের ৪/৫ টি লাইন ধসে গেছে। ধসে যাওয়া একেকটি লাইনে ৫০টি ব্লক আছে, যার একেটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা এক ফুট করে। সব মিলিয়ে ২শ থেকে আড়াইশ ব্লক নদীতে চলে গেছে বলে জানান তিনি। ধসে যাওয়া ব্লকের উপরের আরো একলাইনে সুস্পস্ট ফাটল রয়েছে। প্রকৌশলী হাফিজ বলেন, প্রতিরক্ষা বাঁধগুলো এমনভাবে নির্মিত হয় যে একটি ব্লক আরেকটির সঙ্গে নিবিড়ভাবে আটকে থাকে। এর নিচের দিকে কোন একটি ধসে গেলে তা অন্যগুলোর টিকে থাকার জন্য হুমকিস্বরূপ। আর এটি সেতুর খুব কাছে হওয়ায় সেতু এবং পার্শ¦বর্তী জনপদের জন্য বিপদের কারন হতে পারে বলছিলেন এ প্রকৌশলী। তিনি বলেন, বাঁধ নির্মাণের সময় যেভাবে ঢালু করার কথা সেরকম হয়নি। এর পেট বরাবর (মাঝামাঝি) উচু, আর উপরে ও নিচে নিচু। তিনি মনে করেন গড়াই নদী এমন খর¯্রােতা নয় যে, তিন বছরেই এমন প্রতিরক্ষা বাঁধ ধসে যেতে থাকবে। এছাড়া এ নদী থেকে এর অদূরেই বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিন দেখা যায়। প্রকৌশলী অভি বলেন, এ কারণেও বালুর স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে, যা ভাঙনের একটি অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, পানি কমে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা না করে এখনি মেরামতে পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
এ ব্যাপারে কথা হয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (কুষ্টিয়া) নির্বাহী প্রকৌশলী পিযুষ কৃষ্ণ কুন্ডু জানান, নদীতে এখন পানি কমছে সেই সাথে তীব্র ¯্রােতে তলদেশে স্কাউরিং হওয়ার ফলে এই বাধে ধস হতে পারে। তিনিও এ অংশটি পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেছিলো এলজিইডি। তারাই ভালো বলতে পারবেন কোন নির্মাণ ত্রুটি ছিলো কি না। তবে আমার মনে হয়েছে, বাঁধ নির্মানের আগে জিও ব্যাগ ফেলে যে পরিমাণ প্রস্তুতি নেয়ার দরকার ছিল তাতে ঘাটতি থাকতে পারে- বলছিলেন প্রকৌশলী পিযুষ। নদী গতি পরিবর্তন করতে গেলে অনেক সময় এধরণের ধস বা ভাঙন দেখা দেয়। এবার নদীর প্রবাহ ধসে যাওয়া যায়গা দিয়ে চেপে যাচ্ছে বলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (কুষ্টিয়া) এ নির্বাহী প্রকৌশলী। এ কারণে এখানকার নিচের বালু সরে যাওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে, তিনি এটাকে বড় কোন হুমকি মনে করেন না। বলেন, প্রতিদিনই পানি কমছে নদীতে। এসময়ে একটু ভাঙন হয়। পানি নেমে গেলে ওই অংশ আবার ঠিকমতো মেরামত করা যাবে। এদিকে যারা নির্মাণ করেছিল এ প্রতিরক্ষা বাঁধ সেই এলজিইডি এ বিষয়টি কোন গুরুত্বই দিচ্ছেন না। এলজিউডি, কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। সেখান থেকে জানানো হয় তিনি অসুস্থ। জানা যায়, কোন প্রকৌশলীই ধসে যেতে থাকা বাঁধ দেখতে যান নি। কুষ্টিয়া সদর উপজেলা প্রকৌশলী জহুরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়। তিনি বলেন, তার অফিসের কয়েকজন স্টাফ এটি দেখে এসেছেন। তিনি জানান বাইরে অন্য কাজে আছি। পরে গিয়ে দেখে আসবো। ছবি তুলে উর্ধ্বতনদের জানাবো।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো: আসলাম হোসেন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং এলজিইডি উভয়কেই নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে, যাতে সেতুটি কোনপ্রকার ক্ষতির মুখে না পড়ে সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করা হচ্ছে।
এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আখতার অ্যাসোসিয়েট এ সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ পায়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬০৪ মিটার, প্রস্থ ৬ দশমিক ১ মিটার। এটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৭৮ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে সেতুটি উদ্বোধন করা হয়।
Leave a Reply