December 26, 2024, 9:24 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক, ঝিনাইদহ/
চরম দৈন্যদশার মধ্যে আছে ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ সুগার মিল। বর্তমান অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো চরম মুশকিল বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল। মিলের গুদামে পড়ে আছে ৩৫০০ মেট্রিক টন চিনি যার মুল্য ২১ কোটি টাকা। এছাড়া মিলের ট্যাংকে ও পুকুরে পড়ে রয়েছে ৭ কোটি টাকার চিটাগুড়। আখ চাষিদের পাওনা বকেয়া রয়েছে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। চিনি বিক্রি না হওয়ায় মিলের ৮৫০ জন শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতনভাতা পাচ্ছেন না।
শ্রমিকরা জানাচ্ছেন সর্বশেষ তারা মে মাসের বেতন পেয়েছেন।
গত মৌসুমে সুগার মিলে আখ বিক্রি করে কৃষকরা তাদের বিক্রিত আখের মূল্য এখনও পাননি। বকেয়া টাকার জন্য তারা প্রায়ই মিলে ধরনা দিচ্ছেন।
মিলের বিগত কয়েক বছরের চিত্রে আখ রোপণ কমে যাওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। ২০১০-১১ মৌসুমে ১২ হাজার একর জমিতে আখ রোপনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেখানে অর্জন হয় ৭ হাজার ৪৫৪ একর। ২০১১-১২ মৌসুমে ১২ হাজার একর জমিতে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখান অর্জন হয় ৭ হাজার ৮ একর। ২০১২-১৩ মৌসুমে ১১ হাজার একর জমিতে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে অর্জন হয় ৮ হাজার ৫০০ একর। ২০১৩-১৪ মৌসুমে ১১ হাজার একর জমিতে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখান অর্জন হয় ৩ হাজার ৩২৬ একর। ২০১৪-১৫ মৌসুমে মিলটি ১০ হাজার একর জমিতে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। সেখানে অর্জন হয়েছে ৪ হাজার ৮৮৩ একর।
২০১৫-১৬ মৌসুমে ১০ হাজার ৫০০ একর জমিতে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে অর্জন হয় ৪ হাজার ৯৪১ একর। ২০১৬-১৭ মৌসুমে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৯ হাজার একর। সেখানে অর্জিত হয়েছে ৬ হাজার ৮০ একর। ২০১৮-১৯ মৌসুমে আখ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১০ হাজার ৫০০ একর জমিতে। সেখানে অর্জন হয় ৬ হাজার ৫ একর। ২০১৯-২০ অর্থবছরে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১১ হাজার একর জমিতে। সেখানে অর্জিত হয় ৮ হাজার ৪০০ একর।
মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের ডিজিএম আনোয়ার হোসেন জানান, যথাসময়ে চাষিদের আখের টাকা দিতে না পারায় আখ চাষ কমে যাচ্ছে। চাষিদের গত মৌসুমের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা এখনও বকেয়া রয়েছে। এছাড়া পরিবহন, শ্রমিক সমস্যাসহ বর্তমানে কৃষকরা স্বল্প মেয়াদি ফসল করতে আগ্রহী হওয়ায় দীর্ঘ মেয়াদি ফসল চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার কবীর জানান, চিটাগুড় বিক্রির জন্য টেন্ডার দেওয়া হয়েছিল। টন প্রতি ১৮ হাজার টাকা দর পাওয়া গেছে। কিন্তু চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের নির্দেশ রয়েছে টন প্রতি ২২ হাজার টাকার নিচে বিক্রি করা যাবে না। তাই চিটাগুড়ও বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া ধীরগতিতে চিনি বিক্রির কারণে সময়মতো চাষিদের আখের বকেয়া টাকা ও শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করতে দেরি হচ্ছে। চিনি বিক্রি হলে সব সমস্যা কেটে যাবে।
আনোয়ার কবীর জানিয়েছেন, ধীরগতিতে চিনি বিক্রির কারণে এমনটি সৃষ্টি হয়েছে। তারপরও পর্যায়ক্রয়ে শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ও চাষিদের আখের বকেয়া টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে।
Leave a Reply