December 22, 2024, 8:59 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
কুষ্টিয়ায় এক শিল্পপতিসহ কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কেট ভেঙে জমি দখলের অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে। সদর উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামের রাকিবুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির স্ত্রী-সন্তানসহ চারজন বাদী হয়ে রোববার বিকালে কুষ্টিয়ার যুগ্ম জেলা জজ আদালতে এই মামলা করেন।বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে বিবাদীদের আগামী ২৪ নভেম্বর আদালতে হাজির হওয়ার আদেশ দিয়েছেন।
বিবাদীরা হলেন কেএনবি অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ নামের একটি ফিস ফিড উৎপাদন প্রতিস্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান, সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম, সার্ভেয়ার মো. মনিরুজ্জামান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহিনুজ্জামান শাহীন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গত বছর ১০ জুন সদর উপজেলার বটতৈল এলাকায় কুষ্টিয়া-খলনা হাইওয়ের উপর রাকিবুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির ২২টি দোকানবিশিষ্ট দোতালা ভবন গুঁড়িয়ে দিয়ে জবরদখল করা হয়। গুড়িয়ে দেয়ার পর জায়গাটির দখল নেন কেএনবি অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ মালিক কামরুজ্জামান। তার দাবি ছিল তিনি জমিটি কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ থেকে ইজারা নিয়েছেন। এ ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়।
মামলা সুত্রে জানা যায়, নিজের উপার্জিত সমস্ত সম্বলের বিনিময়ে কুষ্টিয়া পৌর এলাকার বটতৈল মৌজায় ১৯৯৫ সালে প্রায় ১০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন রাকিবুল ইসলাম। ওই সম্পত্তির ওপর নির্মাণ করেন পাকা মার্কেট। তাতে দোকান রয়েছে ২২টি। প্রামাণিক সুপার মার্কেটের ওইসব দোকানে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই নিজ প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থিত কেএনবি এ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রির মালিক কামরুজ্জামানের ওই মার্কেটের ওপর নজর পড়ে। নানাভাবে মার্কেটের মালিককে তার কাছে বিক্রির প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে সাড়া না দেয়ায় ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন তিনি। জমিটি ব্যক্তিমালিকানা হলেও জেলা পরিষদ জমিটি তাদের বলে দাবি করতে থাকেন। এরই মধ্যে জেলা পরিষদ ওই জমির মালিকানা দাবি করে কুষ্টিয়ার যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালতে মামলা দায়ের করে দেয়।
মামলা চলমান অবস্থায় ওই জায়গা কেএনবি এ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক কামরুজ্জামান নাসিরের নামে লিজ প্রদান করে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ। ওই মামলা বিচারাধীন অবস্থাতেই ১০ জুন হঠাৎ করেই বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয় মার্কেটটি।
আদালতে মামলা চলমান অবস্থায় পেশিশক্তি ব্যবহার করে প্রকাশ্যে এমন তান্ডব চললেও কেউ টুঁ-শব্দ করেনি। ঘটনাস্থলে দোকান মালিক ও ভাড়াটিয়াদের আহাজারি কারো মনে নাড়া দেয়নি।
আদালতে মামলা চলাকালীন কিভাবে এই ধরনের কাজ সম্ভব এর সদুক্কর কেউ দিতে না পাররেও জেলা পরিষদের যোগসাজশে এমনটি ঘটেছে তা পরিস্কার হয়ে যায়। অভিযোগ উঠে সবাইকে ম্যানেজ করেই এটা সম্ভব হযেছে। মার্কেট মালিক পক্ষের অভিযোগ করে জমিটি কিনতে নানাভাবে প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন কেএনবি এ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক কামরুজ্জামান নাসির। জমি কিনতে না পারায় পেশিশক্তি প্রয়োগ করে মার্কেটটি ভেঙে দিয়েছেন তিনি।
তবে কেএনবি এ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রির মালিক ঐ সময় দাবি করেন জেলা পরিষদের কাছ থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে লিজ নেন তিনি। তাছাড়া অন্যসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। আর জেলা পরিষদ বলছে ওই জমিটি নিয়ে আদালতে মামলা করেছে জেলা পরিষদ এবং জমিটি লিজ দেয়া হয়েছে। তবে উচ্ছেদের বিষয়ে জেলা পরিষদ কিছুই জানে না। একজন কর্মকর্তা জানান কেএনবি তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জমিটি দখলে নিচ্ছে।
সহকারী প্রকৌশলী রুহুল আযম ঐ সময় মিডিয়াকে জানান, জেলা পরিষদের আয় বৃদ্ধির জন্য সিএস রেকর্ডিও জমি দখল দিতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার বলে জেলা পরিষদের সকল বেদখলীয় জমি পুনরুদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। ওই জমিটি কেএনবি এ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রির নামে লিজ প্রদান করা হলেও উচ্ছেদের সঙ্গে জেলা পরিষদের কোনো সম্পর্ক নেই। জেলা পরিষদ উচ্ছেদ করলে আমাদের লোক এবং মেশিন যেত। ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেন আমাদের কোনো লোক অথবা মেশিন সেখানে ছিল না। তারা নিজেরাই দোকান ঘর উচ্ছেদ করেছে।
কুষ্টিয়া জজকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. মাহাতাব উদ্দিন জানান, মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কোনো অথরিটি আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না। সম্পন্ন বেআইনিভাবে মার্কেটটি উচ্ছেদ করা হয়েছে। কামরুজ্জামান নাসিরের নামে জেলা পরিষদের দেয়া ওই লিজে দাগ নাম্বার থাকলেও কোনো খতিয়ান নাম্বার নেই। খতিয়ান নাম্বার না দেয়ার কারণ ওই খতিয়ান নাম্বারটি ব্যক্তি মালিকানাধীন।
ওই আইনজীবী বলেন, যেখানে জেলা পরিষদ নিজেই বাদী হয়ে মামলা করেছে, সেই মামলায় আদেশ না হওয়া পর্যন্ত জেলা পরিষদ নিজের বলে সম্পত্তি দাবি করতে পারে না এবং কাউকে লিজও দিতে পারবে না। লিজ দিলেও সেটি সম্পন্ন বেআইনি হবে। যারা উচ্ছেদের সঙ্গে জড়িত তারা ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ক্রিমিনাল মামলা করতে পারবেন। মার্কেট ভ্যালু অনুযায়ী তিনি ক্ষতিপূরণ পাবেন।
কেএনবি এ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান নাসির জানান, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ থেকে তাদেরকে লিজ দেয়া হয়েছে। জেলা পরিষদের প্রতিনিধি উপস্থিত থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে। এর সঙ্গে কেএনবি এ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এদিকে মামলার এক পর্যায়ে রাকিবুলের মৃত্যু হলে তার মা রোকেয়া খাতুন, স্ত্রী হোসনেয়ারা খাতুন, ছেলে হুসাইনুল ও হুজ্জাতুল ইসলাম এই চারজন বাদী হেয় রোববার যুগ্ম জেলা জজ আদালতে এই মামলা করেন।
এ বিষয়ে বিবাদী কামরুজ্জামান বলেন, জমিটি তাকে জেলা পরিষদ লিজ দিয়েছে। মামলা হয়ে থাকলে তিনি তা আইনগতভাবে মোকাবিলা করবেন।
মামলার অপর বিবাদী শফিকুল আজম বলেন, “আমি এখানে চাকরি করি। আমার ব্যক্তিগত কোনো বিষয় নয়। যা কিছু হয়েছে সব চেয়ারম্যান স্যার ও প্রধান নির্বাহীর হুকুমে আমি দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। মামলাও ওনারাই দেখবেন।”
Leave a Reply