December 21, 2024, 10:17 pm
পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম/
করোনা থেকে বাঁচতে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে হবে। এটা করতে হবে কারন যখন কোন ভাইরাস আমাদের শরীরে প্রবেশ করে তখন আমাদের শরীরের এন্টিবডি গুলো ব্যবহার হয় তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়। আর এই এন্টিবডি তৈরি করতে হলে আমাদের পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং কিছু কাজ করতে হবে।
নিচে সংক্ষিপ্ত ভাবে দেওয়া হলো-
কিভাবে আমরা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবো/
১. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সুষম খাবার রাখুন। সুষম খাবার হলো সব ধরনের খাদ্য উপাদান সঠিক ভাবে উপস্থিত থাকা।
আপনার শরীরের ওজন, উচ্চতা অনুযায়ী ক্যালরি ঠিক করে, খাবার গ্রহন করতে হবে। খাবারে অবশ্যই শর্করা ( ভাত, রুটি,নুডুলস, আলু ইত্যাদি), আমিষ ( মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল ইত্যাদি), ফ্যাট ( যে কোনো তেল, দুধ, মাংস ইত্যাদি), সবজি ( সবুজ, হলুদ শাক সবজি) ও ফল রাখতে হবে।প্রত্যেকটা খাদ্য উপাদান থেকে নিয়ম অনুযায়ী খাদ্যতালিকায় যুক্ত করতে হবে।
২. প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় ভিটামিন সি যুক্ত খাবার রাখতে হবে। ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্ট, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ভিটামিন সি ক্ষতিকর জীবাণুগুলির বিরুদ্ধে এপিথিলিয়াল প্রতিরোধব্যবস্থাকে দৃঢ় করে। এমনকি অণুজীবের ধ্বংস হারও বাড়িয়ে দেয়। যেমন – পেয়ারা, আমলোকি, কমলা, জাম্বুরা, সজনে পাতা, শাক, লেবু, কাচামরিচ ইত্যাদি তে ভিটামিন সি” পাওয়া যাবে।
৩. প্রতিদিন রোদে ( সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩ টা) ১৫-৩০ মিনিট বসতে হবে। এতে আপনার শরীর সূর্যের আলো নিয়ে কার্যকরী ভিটামিন ডি তইরি করবে।যা আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমরা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।অনেক সময় অনেকের শরীরে এই কার্যকরী ভিটামিন ডি খুব কম থাকে। সেক্ষেত্রে ডক্টর এর পরামর্শ নিয়ে সাপ্লিমেন্টারী খেতে পারেন। মনে রাখবেন সূর্যের আলো ব্যাতিত ভিটামিন “ডি আমাদের শরীরে কার্যকর হবেনা। মাছের তেল, ডিম ইত্যাদি ভিটামিন ডি থাকে।
৪. প্রচুর পরিমানে পানি পান করুন। খাবারের মধ্যে পানি না খেয়ে খাওয়ার আগে এবং পরে খাবেন।সকালে খালি পেটে পানি খেতে পারেন।
৫. প্রোবায়োটিক্স খেতে হবে প্রতিদিন। অনেকেই এর নাম হয়তো জানেন না। এটি একটি ভালো ব্যাকটেরিয়া যা আমাদের শরীরে খারাপ ব্যাকটেরিয়া গুলোকে রিমুভ করতে দ্মসাহায্য করে। খাবারের মধ্যে দই এ প্রোবায়োটিক্স পাওয়া যায়। এছাড়াও সাপ্লিমেন্টারী হিসেবেও খেতে পারেন।
৬. ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার বা ভালো ফ্যাট যা কডলিভার তেল, অলিভ তেল, সামুদ্রিক মাছের বা মাছের তেল, বাদাম ইত্যাদি থেকে পাওয়া যায়, সেগুলো প্রতিদিন খেতে হবে।এতে ভিটামিন “এ, ডি ” পাওয়া যায়।
৭. জিংক সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিন খেতে হবে। প্রোটিন জাতীয় খাবার থেকে আমরা জিংক বেশি পেয়ে থাকি। তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় প্রোটিন ( মাছ, মাংস, ডাল, দুধ, ডিম, মিষ্টিকুমড়ার বিচি ইত্যাদি) বেশি করে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে যারা কিডনি রোগী তাদের ডক্টরের পরামর্শ নিয়ে প্রোটিন গ্রহন করতে হবে।
৮. প্রতিদিন কম পক্ষে ২০ মিনিট শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। সেটা যেকোন ভাবে হতে পারে। ব্যায়াম করে বা বাসার কাজ করে।
৯. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ঘুমের প্রয়োজন। রাতে ভালো ঘুম দিতে হবে।
১০. অবশ্যই আমাদের মানুষিক সস্তি থাকতে হবে। যেকোন রকমের দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে হবে। সবসময় মনকে হাসি খুশি রাখতে হবে।
১১. আমাদের দেশের যেকোন ধরনের মসলা জাতীয় খাবার যেমন, আদা, রসুন, লবংগ্ব, সিড ( সরিষা, গোল মরিচের গুঁড়ো, চিয়া সিডস, ইত্যাদি) কালোজিরা ইত্যাদি প্রতিদিন একটু একটু করে খাবেন।
আর মনে রাখতে হবে এই খাদ্যাভ্যাস গুলো প্রতিদিন মেনে চলতে হবে। একদিন মানলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হবেনা। করোনা প্রতিরোধ এর জন্য অবশ্যই আমাদের এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উপরের খাবার গুলো প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় রাখবেন।সবাই সুস্থ্য থাকুন বাসায় থাকুন।
পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম
ল্যাব এইড পল্লবী ও
প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট বনানী
Leave a Reply