একটি দৈনিক কুষ্টিয়া বিশেষ প্রতিবেদন/
কুষ্টিয়ায় অব্যাহত গতিতে বাড়ছে করোনা। প্রায় প্রতিদিনই একাধিক করোনা রোগী এখানে চিহ্নিত হচ্ছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন সর্ব মহল। অনেকের প্রশ্ন হঠাৎ করেই কেন এই জেলাতে এই রোগের সংক্রমণ বাড়ল। জেলাটি শুরু থেকে মোটামুটি নিরাপদ অবস্থানে ছিল। এ নিয়ে যখন নানা কানাঘুষা চলছে তখন জেলায় সরকার ঘোষিত রেড জোন নিয়ে এখন কাজ করছে জেলা প্রশাসন পুলিশ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। এসব বিভাগের নীতি বাস্তবায়নকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে তারাও এখন একমাত্র ভরসা করছেন রেড জোন ঘোষিত এলাকাগুলোতে কঠোর নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি। তারা বলছেন রেড জোন চিহ্নিত এলাকাগুলো সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে পুরোপুরি লকডাউন বাস্তবায়ন করতে পারলে সংক্রমণ কমবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পালনে বাধ্য করলে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কমে আসবে। তারা বলছেন যদি বর্তমান সময়ে রেড চিহ্নিত এলকাগুলোতে সঠিক নিয়মে সাধারণ ছুটি দিয়ে পুরোপুরি লকডাউন বাস্তবায়ন করতে পারা যায় তাহলে এই পিক টাইম আরও ১০ দির আগে পোওয়া যাবে। ফলে আগস্ট মাসে সংক্রমণ নিন্মমুখী থাকবে। তারা বলছেন পিক বা চূড়ায় নির্ভর করে সংক্রমণ প্রতিরোধে কেমন কাজ করা হচ্ছে তার উপর। সে ক্ষেত্রে যত বেশি টেস্ট করতে পারা যাবে তত বেশি করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা নির্ণয় করা যাবে। শনাক্ত ব্যক্তিদের যদি বাড়িতে আইসোলেশনে রেখেও আটকে রাখা যায় তাহলেও নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমবে। এবং সফলতাও আসবে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তাপস কুমার সরকার জানান শুরু থেকেই তাদের পরামর্শ ছিল কঠোরভাবে জনচলাচল নিয়ন্ত্রণ করা। বিশেষ করে মানুষকে ঘরে রাখা ও জেলার বাইরে থেকে কুষ্টিয়ায় জনপ্রবেশ বন্ধ করে দেয়া। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সেটি করেও যাচ্ছিল। মাঝখানে ছেদ ঘটে। ওপেন করে দয়া হয় সবকিছু। ফলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় অনেককিছু। ডাক্তার তাপস করোনার ক্রাইসিসের একেবারে শুরু থেকে অদ্যাবধি করোনা নিয়ে কাজ করে আসছেন। বিস্তর তথ্য-উপাত্ত রয়েছে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের হাতে।
তিনি জানান ১০ মে থেকে শহরের জনচলাচল ওপেন হবার ৫দিন পর থেকেই তারা করোনা উপসর্গ সম্পন্ন রোগী পেতে থাকেন। ২৫ মের পর তারা বুঝতে পারেন যা ঘটার ঘটে গেছে। ঐ সময় তিনি বিভিন্ন মিডিয়াতে এমনটা প্রকাশও করেছিলেন যে জুন মাসে কুষ্টিয়ায় বিপর্যয় নামতে পারে বলে তিনি জানান।
ডাক্তার তাপস জানান রেড জোনে প্রচুর রোগী পাওয়া গেছে মানে হলো সেখানে আরো অনেক রোগী রয়েছে। তাদেরকে ধরে রাখতে হবে নিজ নিজ জায়গায়। তাহলে তারা নিজেরাও যেমন বাঁচবে, নিরাপদ থাকবে অন্যেরা। তিনিও প্রয়োজনে কঠোরতা প্রদর্শন করে হলেও রেড জোন বাস্তবায়নের আহবান জানান।
এ বিষয়ে কথা বলেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভির আরাফাত পিপিএম (বার)। তিনি এ নিয়ে বিস্তর উস্মা প্রকাশ করেন। তিনি অনেকটাই হতাশ বিশেষ করে মানুষের আইন মেনে চলার প্রবনতা নিয়ে। তিনি বলেন মানুষতো আগে বেঁচে থাকবে তারপর না অন্যকিছু করবে। তিনি বলেন কিন্তু এই শহরে পুলিশ দেখতে পেয়েছে যে কিছু মানুষের প্রবনতাই এমন যে তাদের কাছে জীবন নয় জীবিকাই মুখ্য। যার কারনে তারা কোন নিয়ম মানতেই চায়নি। কিন্তু মানুষতো বেঁচে থাকবে তার নিজ গরজেই।
তিনি প্রশ্ন করেন যারা সেদিন বিদ্রোহ করেছিল পুলিশের বিরুদ্ধে, মোবাইল কোর্টের বিরুদ্ধে তারা এখন কি বলবেন। তারা কি এখনও বাইরে আছেন না ঘরে রয়েছেন ? তিনি বলেন পুলিশের কাজটি এই মুহুর্তে সবচে কঠিন। অসংখ্য পুলিশ আক্রান্ত হযেছে। চারিদিকে রোগ ব্যাধী তার মধ্যেও পুলিশ প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে পুলিশ কাজ করে যাবে বলে তিনি জানান।
তিনি সবাইকে নিয়ম মেনে চলার আহবান জানান।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন যিনি শুরু থেকেই নিরলসভাবে করোনা মোকাবেলায় জেলায় সমন্বয়ের কাজ করে চলেছেন তিনিও জেলার মানুষের আইন মেনে চলার প্রবনতা এত কম দেখে হতাশা প্রকাশ করেন। সরকারী প্রশাসনের জেলা পর্যায়ের এই প্রধান কর্মকর্তা জানান তার প্রশাসনের সমস্ত মেকানিজম তিনি এই করোনা মেকাবেলার পেছনে নিয়োজিত করেছেন। সবসময়ই সর্বোত্তম সেবাটি তিনি জেলাবাসীর জন্য দিতে কুন্ঠা করেননি। ছুটে বেড়িয়েছেন জেলার এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। কিন্তু তিনি বলেন শেষ পর্যায়ে এসে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছি যে মানুষের মধ্যে সেই ধরনের সচেতনতাবোধ সৃষ্টি হলো না। তিনি বলেন কে আক্রান্ত আর কে নয় কেউ যেখানে জানে না সেখানে একে অপরে দুরত্বই একমাত্র সবাইকে নিরাপদ রাখতে পারে।
তিনি বলেন বাঁচতে হলে নিয়ম মেনে চলতেই হবে। প্রশাসন তার সর্বোচ্চ করতে প্রস্ততু কিন্তু মানুষকে সেটা রিসিভ করতে হবে। আইন কত প্রয়োগ করা সম্ভব ?
জেলা প্রশাসক এমনকি নিজেও এক পর্যায়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। বর্তমানে সুস্থ্য হয়ে তিনি কাজে ফিরেছেন। তিনিও বর্তমান রেড জোনে প্রশাসনের আরো বেশী তৎপরাতার কথা জানান। তিনি সবাইকে নিয়ম মেনে চলার আনহবান জানান।
জানা যায়, সবশেষ মঙ্গলবার (২৩ জুন) দেশের চার জেলার ৭টি এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করা হয়। এরও আগে গত ২১ জুন মধ্যরাতে ১০ জেলার ২৭টি এলাকা ও পরদিন ২২ জুন পাঁচ জেলার ১২ এলাকাকে রেড জোন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে সেখানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু করোনায় সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি ঢাকায় থাকলেও সেখানে ৪৫টি রেড জোন চিহ্নিত করা হলেও রেড জোন ঘোষণা করা হয়নি। তবে পরীক্ষামূলকভাবে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারকে রেড জোন ঘোষণা করে সেখানে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি