দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক//*/
এবং তারপরও তামাক চাষ করে থাকেন দক্ষিণ পশ্চিমের গুরুত্বত্বপূর্ণ জনপদ কুষ্টিয়ার কৃষকরা। এই জেলাতে আয়ের প্রধান উৎস কৃষ্ িহলেও কৃষকদের কাছে তামাক অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসাবে সমান জনপ্রিয়। এই জেলা খাদ্যশষ্য উৎপাদনে উদ্ধৃত হওয়ার কারনে এখানে কৃষকদের কাছে বাড়তি একটি বড় আয়ের সুযোগ এই তামাক চাষ। প্রতি বছরে তামাক চাষের মধ্য দিয়ে একটি বড় পরিমাণ নগদ অর্থ হাতে আসে এ অঞ্চলের কৃষকদের। রবিশষ্য উৎপাদনের বিপরীতে যা তাদের নিকট লাভজনক। চাহিদা এবং লাভ দুটোই কৃষকদের অনুকূলে থাকায় প্রতিবছর তাই অনেক সমীকরণ, অনেক নিরুৎসাহিতকরণ প্রচেষ্টা সত্বেও কৃষকরা তাদের জমিতে তামাক চাষ করে থাকেন। চাহিদা ও উৎপাদনের সাথে সমান্তরালভাবে এখানে গড়ে উঠেছে দুটি মাল্টি ন্যাশনালসহ ছোট বড় অনেকগুলো তামাক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান।
কৃষি বিপণন ঢাকা অফিস সুত্রে জানা যায় কুষ্টিয়াতে এবার কৃষকেরা বি”িছন্নভাবে ৩৬ হাজার একর জমিতে জমিতে তামাক চাষ করে। কোথাও কোথাও এসব তামাকের কোন কোন সাথী ফসলও ছিল বলে জানা যায়। কয়েক মাসের পরিচর্যা শেষে সাধারণ সুত্র ধরেই কৃষকরা অপেক্ষা করছিলেন তামাক বিক্রয়ের জন্য। কিš‘ বাধ সেধে দেয় বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মরণব্যধি করোনা ভাইরাস। এটি এমন একটি সময়ে দেখা দেয় যখন চাষিরা তামাক কর্তনের দোড় গোড়ায়। কোথাও কোথাও কর্তন করা হযেে গেছে। ফলে বিপাকের পড়ে যায় কৃষকরা। বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেয়। কারন করোনার কারনে একে একে লকডাউনে চলে যেতে থাকে দেশের সকল স্বাভাবিক কার্যক্রম। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কাজ গুটিয়ে নিতে হয় তামাক কোম্পানীগুলোকেও। ফলে চোখে অন্ধকার দেখতে থাকেন তামাক চাষিরা। তারা ধন্না দিতে থাকেন তামাক কোম্পানীগুলোর কাছে। অন্যদিকে তামাক কোম্পানী গুলোরও নিরুপায় অব¯’া হয়ে দাঁড়ায় কারন তামাক চাষিদের সাথে তাদেরও একটি দীর্ঘ সম্পর্কের কমবেশী বিপণন শর্ত রয়েছে।
বেশী বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দেয় কৃষকদের তরফে। এলাকা ঘুরে দেখা যায় যে, ইতিমধ্যে চাষীরা মাঠ থেকে তামাক তাদের ঘরে তুলে এনেছেন। পরবর্তী ফসল আউস ধান, সবজি সহ অন্যান্য ফসল চাষের পরিকল্পনা তাদের। কিš‘ তামাক বিক্রয় করতে না পারার কারনে তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক স্থবিরতা নেমে আসে। চাষীরা জানান তারা অর্থশুন্য। বিগত বছরগুলোর ন্যায় তারা তামাক কোম্পানিগুলোর কাছে উৎপাদিত তামাক বিক্রয় করে পরবর্তী ফসলের খরচের যোগান নিশ্চিত করে আসছে।
এ প্রতিবেদক বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে বিষয়টির সত্যতা পান। বিভাগ গ্রামের আব্দুল মান্নান জানান তার সাড়ে পাঁচ বিঘা তামাক ছিল। তিনি তামাক বিক্রয় করে তার পারিবারিক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আগামী ফসল উৎপাদের খরচ মেটানোর অপেক্ষায় ছিলেন। কিš‘ তিনি ঘোর অন্ধকারে পড়ে যান কারোনার কারনে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবার কারনে।
“আমি বারবার বিএটিবি’র (বৃটিশ আমেরিকান টোবাকো) কর্মকর্তাদের সাতে যোগাযোগ করতে থাকি। এক পর্যায়ে হতাশ হয়ে উঠি। কোন ভাল খবর না পেয়ে।
বেশ ক’টি তামাক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান তারাও বিষয়টি স্থানীয় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কৃষি অধিদফতর সহ সরকারের সর্ম্পকযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবহিত করতে থাকেন।
ঠিক ঐ সংকটময় মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী তার দুরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্ব দিয়ে জনগনের জান ও মাল রক্ষার্থে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও নির্দেশনার একটি ৩১ দফা নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৩১ দফা নির্দেশনার মধ্যে অন্যতম নির্দেশনা ছিল দিনমজুর, শ্রমিক, কৃষক যেন অভুক্ত না থাকে। জমি পতিত না রেখে অধিক ফসল উৎপাদন করতে হবে এবং কৃষকগণ নিয়মিত চাষাবাদ চালিয়ে যাবেন যেন খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত থাকে। এই নির্দেশনার বাস্তবায়নে সব কিছু প্রায় লক ডাউনে থাকা সত্ত্বেও অন্যান্য জরুরী সেবার পাশাপাশি কৃষি পন্য উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন খাতে নির্বিঘেœ সম্পাদিত হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এমন সময় বিভিন্ন তামাক কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসে যাতে চাষীরা তাদের উৎপাদিত তামাক নিজ নিজ কোম্পানিতে বিক্রয় করতে পারে।
“এক পর্যায়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতি পারি যখন জানলাম তামাক ক্রয় করা হবে,” জানান তামাক চাষি মান্নান। তিনি জানান কালক্ষেপন না করে তিনি তামাক বিক্রয় করেন স্থানীয় বিএটিবির কাছে। ইতোমধ্যে তিনি আউশ ধান রোপনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন বলে জানান।
সম্প্রতি এই করোনাকালীন সময়ে কিভাবে তামাক ক্রয় করা হচ্ছে তা জানতে এ প্রতিবেদক যান দেশের সবথেকে বড় তামাক প্রক্রিয়াকরণ ও সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএটিবির চেঁচুয়া ক্রয় কেন্দ্রে। দেখা যায় কোম্পানিটি চাষীদের করোনা ঝুঁকি বিষয়ক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে তামাক ক্রয় করছে।
কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান তারা কোম্পানির সকল কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন এই মুহূর্তে চাষীদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা সৃষ্টির বিষয়টা বিবেচনায় এনে শুধুমাত্র তামাক ক্রয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
কোম্পানি ঘুরে দেখা যায় তারা সকল চাষীকে একত্রে না এনে প্রতি ঘন্টায় নিদিষ্ট সংখ্যক চাষীকে অবহিত করে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করে তামাক ক্রয় করা হচ্ছে।
সকাল থেকে বেলা ৩ টা পর্যন্ত তামাক ক্রয় কার্যক্রম চলছে। প্রতি ঘন্টায় ৮/১০ জন চাষী নিদিষ্ট ক্রয় কেন্দ্র উপস্থিতহয়ে তাদের তামাক বিক্রয় করছেন। চাষীদের থার্মোমিটার গান দিয়ে তাপমাত্রা পরিমাপ করা হচ্ছে। এরপর তারা কোম্পানি কর্তৃক সরবরাহকৃত মাস্ক পরে, হাত হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধুয়ে মার্কিং করা নিদিষ্ট স্থানে অপেক্ষা করছেন।
ক্রয় কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় স্থানে স্থানে করোনা সচেতনতা মূলক পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ঝোলানো হয়েছে।
মিরপুর উপজেলার হাজরাহটি গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন জানান চরম এক দুর্দিন থেকে উদ্ধার হলো। তিনি এই পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ দেন।
বিএটিবির কর্মকর্তারা জানান এ বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন স্থানীয় জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, কৃষি সস্প্রসারন অধিদপ্তর, কৃষি বিপনন অধিদপ্তর সহ সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান সমুহ।
উপস্থিত চাষীদের সাথে আলাপকালে তারা কোম্পানির ক্রয় কেন্দ্র খুলে রাখায় স্বস্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন এই মুহূর্তে যদি তামাক না বিক্রয় করা যেত তাহলে পরবর্তী ফসল চাষাবাদে অর্থের যোগান দেয়া তাদের জন্য কষ্টকর হতো। এমনকি তাদের অনেকের হাতে বোরো ধান কাটার জন্য শ্রমিকের মজুরিরও অভাব রয়েছে। অন্যদিকে, তামাক একটি পচনশীল পণ্য বিধায় এই মূহুর্তে এটি বিক্রয় না করলে নস্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা ছিল।
মুল চিত্র হলো প্রতি বছর এপ্রিল মে মাসে তামাক ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্য দিয়ে কয়েক শত কোটি টাকা এই অঞ্চলের চাষীদের আয় হয় যা জেলার অর্থনীতির একটি বৃহত্তর অংশকে সচল রাখতে বড় রকমের অবদান রাখে।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি