একটি দৈনিক কুষ্টিয়া বিশেষ প্রতিবেদন//*/
দেশের প্রধান সেচ প্রকল্প জি-কের অধীনে কুষ্টিয়াসহ আশে পাশের ৪টি জেলায় প্রধান ফসল ধান। এখন মৌসুম শুরু হয়েছে বোরোর। ইতোমধ্যে ধান পাকতে শুরু করেছে কোন কোন এলাকায়। কিš‘ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার রোধে গণপরিবহন লকডাউনে থাকায় কৃষি শ্রমিকদের চলাচল সীমিত হয়েছে। ফলে অনেক এলাকার মতো কুষ্টিয়া জেলায় ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যা”েছ না। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। কোন দিশে পাচ্ছেনা তারা যেখানে তাদের নিজেদেও চলাচলও সীমিত।
এ অবস্থায় নিজেদের ক্ষেতের ফসল যথাযথভাবে ঘরে তোলা নিয়ে চিন্তিত কৃষিজীবী পরিবারগুলো। আগাম বৃষ্টির পূর্বাভাসে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন অঞ্চলের চাষীরা।
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে শুধু কুষ্টিয়াতেই ৩১ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। সেচ প্রকল্প জি-কের অধীনে কুষ্টিয়াসহ আশে পাশের ৪টি জেলায় চাষ হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার হেক্টও জেিমতে এই বোরো ধান।
কৃষিবিভাগ বলছে, ফসল কাটতে হবে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগবে। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, এ মাসের শেষ দিকে প্রচুর বৃষ্টি হতে পারে। ফলে ফসলহানির আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন কৃষক।
সদর উপজেলার কমলাপুর গ্রামের কৃষক খোকন আলী জানায় ‘এবার ভালো ফসল হয়েছে। এরই মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এখন ধান কাটার জন্য শ্রমিক পাওয়া যা”েছ না।’
কৃষক অব্দুল লতিফ বলেন, করোনার কারণে এবছর শ্রমিক ধান কাটতে রাজি হচ্ছে না। বাইরে থেকেও আসছে না। ধান কাটা হ”েছ ধীর গতিতে। এভাবে চলতে থাকলে ধান কাটা নিয়ে কৃষক সমস্যায় পড়বে।
কৃষক শামছুল ইসলাম বলেন, ২৮ জাতের ধান পুরোপুরি পেকে গেছে। সপ্তাহ খানেক পর ২৯ জাতের ধান পাকবে। এ অবস্থায় ধান কাটার জন্য হাজার হাজার শ্রমিক লাগবে। শ্রমিকের ব্যব¯’্যা করতে হবে দ্র“ত।
অন্যদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলেন, এলাকায় গড়ে ১০ ভাগ জমির ধান পেকে গেছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে পুরো ধান কাটা শুর“ হবে। এখন ২৮ ধান পাকছে। আগামী সপ্তাহে ২৯ জাতের ধান পাকতে শুর“ করবে।
তবে স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এ সংকট থেকে উত্তরণে কৃষকদের ধান কাটার যন্ত্র সরবরাহ করা হ”েছ। এতে দ্র“ত সময়ে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন চাষিরা।
এসব ধান কাটার জন্য কৃষকদের ৫০ ভাগ ভর্তুকিতে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার দি”েছ কৃষি অফিস।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘কৃষকরা যাতে ঠিক সময়ে ধান কাটতে পারেন, এজন্য আমরা যন্ত্র ব্যবহারের ওপর জোর দি”েছন তারা। তিনি জানান প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী বোরো মৌসুমে কৃষকের ধান কাটার সমস্যা সমাধানে ৫০ শতাংশ ভর্তুকিতে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেশিন দি”িছ। অনেক সময় শ্রমিক সংকটে ধান নষ্ট হয়ে যায়। কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ব্যবহারের ফলে কৃষকের ধান আর নষ্ট হবে না।’
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তদরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) রঞ্জন কুমার বলেন, ‘আমরা জেলাব্যাপী যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান কাটার ওপর জোর দি”িছ।’
সরকারি হিসাবে চলতি রোরো মওসুমে দেশে ৪১ লাখ ২৮ হাজার ৫৫০ হেকটর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসেবে হাওড়াঞ্চলে এবার বেরো আবাদ হয়েছে নয় লাখ হেকটরের বেশী জমিতে। এত পরিমান জমি থেকে ধানকাটা ও মাড়াইয়ের জন্য ৮৪ লাখের মত শ্রমিকের দরকার। এ হিসাবে প্রতিদিন ৬৬ হাজার অভিবাসী শ্রমিক প্রয়োজন।
ওদিকে সরকারি হিসাবে দেশে করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন প্রায় ২ কোটি ৪২ লাখ মজুর ও বেতনভোগী শ্রমিক। এ অবস্থয় এদের মধ্যে ধানকাটা ও মাড়াইয়ের কাজ জানে এমন শ্রমিকদের কাজে লাগিয়ে ধানের আঞ্চলে কৃষি শ্রমিকের সংকট মোকাবেলা যায় এবং শ্রমিকদেরও সাময়িক আয়ের ব্যব¯’া করে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি বিষেষজ্ঞগণ।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি