দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক: বাংলা নববর্ষ অনেক কিছুকে অনেকভাবে তুলে আনে এই বাংলা ভুখন্ডে। বছরের প্রথম দিনে হালখাতা তার একটি। সময়ের নির্মম বাস্তবতায় এই যুগে এই হালখাতার রঙ কিছুটা ফিকে হলেও এবার একেবারেই ফিকে। এবার একেবারেই থেমে গেল হাজার বছরের এই দিনটি। কারন করোনা ভাইরাস। সর্বব্যাপী লকডাউন। ব্যবসায়ীরা এটাকে বলেছেন বিপর্যয়। কারন অনেক লেনদেন থাকে তাদের বছরের এই দিনটিকে ঘিরেই।
অন্যদিকে করোনা কেবল যে হাজার বছরের একটি ঐতিহ্যকেই পেশে দিয়েছে তা নয় ; ছকের ওপাশে টেনে নিয়েছে নববর্ষের আনন্দটাও। কথা বলতেই শোনা গেছে অনেক ব্যবসায়ীর আক্ষেপ। জেলা শহরের প্রায় শতাধিক স্বর্ণ ব্যবসায়ী, মাড়োয়ারী সম্প্রদায়সহ ছোট-বড়-মাঝারী সবার মধ্যেই কাজ করছে একধরনের বেদনা।
স্বর্ণ ব্যবসায়ী মাধব কুমার চন্দ্র জানান তার শতবছরের ঐতিহ্য ছিল এই হালখাতা। এবার তা করা যাচ্ছে না। তার অনেক বাঁকীর খাতা ছিল। তিনি জানান হয়তো পড়েই থাকল। আরেক ব্যবসায়ী তার পুঁজিতে টান পড়ার আশংকায় বেশ শংকিত।
ব্যবসায়ীরা জানান নতুন বছরের আয়োজনে ছিল না কোনো কমতি। মিষ্টি, ফুল-ফল, কার্ড আর উপহারের সব আয়োজনই ছিল। কিন্ত সব উদ্যেগ ভেস্তে গেল। ফলে আয়োজনে করা বিনিয়োগসহ নতুন বছরে পাওনা আদায় থেকেও বঞ্চিত হলো তারা।
শহরের থানা মোড়ের একজন ফুল ব্যবসায়ী জানান এটি আরেকটি দিন তাদের জন্য। অনেক বেচাকেনা হবার আশাতে ছিলেন। কিন্তু এবার টানা ছুটি ও লকডাউনের কারণে তাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। যেখানে পৃথিবীর অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বাংলাদেশ এর বাইরে নয়।
মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা জানান লাল রঙা সেই খাতার চাহিদা কমে গেছে। উৎসবের চেয়ে দোকানের কর্মচারীদের বেতন দেয়ার চিন্তায় অস্থির ব্যবসায়ীরা।
ছোট-বড় প্রায় সব দোকানেই এই সময়ে কেনাকাটার ওপর বিশেষ ছাড় থাকে। মফস্বল শহর তো বটেই গ্রামেও অস্থায়ী দোকান তৈরি করে বৈশাখী মেলা বসে। বাড়তি রোজগারের আশায় অন্য বছর এই সময়ে দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো নানা ধরনের পোশাক বাজারে নিয়ে আসে। ইলিশ মাছ, মিষ্টি, দই ও তরমুজসহ নানা ব্যবসায় চাঙ্গা হয়ে ওঠে স্থানীয় ব্যবসায়ী, এমনকি বেকার ছেলেমেয়েরাও। সেই রোজগার থেকে অনেকেই অন্য ব্যবসার মূলধনও জোগাড় করেন। কিন্তু এবার সব বন্ধ। এক কথায় বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা হয়েছে।
এদিকে পোশাকের বাজারের পাশাপাশি এই সময়ে জমে ওঠে ইলিশ মাছ ও তরমুজের বাজারও। বাদ পড়ে না দই মিষ্টিও। এ সময় চাহিদা এত বেশি থাকে ইলিশ মাছের হালি ছয় থেকে আট হাজার টাকাও বিক্রি হয়। করোনার কারণে এ বছর চাহিদা ইলিশের নেই। বাজারে অন্য বছরের এই সময়ের তুলনায় দামও কম। এক কেজি ওজনের ইলিশ ৮০০-৯০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। যা আগে দেড় হাজার টাকা গুনতে হতো। দুপুর ২টার পর দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভিড় নেই তরমুজের দোকানেও। একই অবস্থা মিষ্টির দোকানেও।
মাছ ব্যবসায়ী বাবু জানান, অনেক ইলিশ তার স্টকে ছিল। তিনি চরম বাজে অভিজ্ঞতার আশংকা করছেন এসব মাছ নিয়ে। তিনি নিজেও হালখাতায় বসতে পারছেন না। অন্যদিকে মহাজন তাগাদা দিয়েছেন বলে জানা।
সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর : ড. আমানুর আমান,এম.ফিল (আইইউকে), পিএইচডি ( এনবিইউ- দার্জিলিং)
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: শাহনাজ আমান।
কার্যালয়:- থানা ট্রাফিক মোড়, কুষ্টিয়া।মোবাইল- ০১৭১৩-৯১৪৫৭০, ইমেইল: info.dailykushtia@gmail.com
ই-পেপার কপি